ঢাকাসহ সারা দেশে দ্বিতীয় দফা লকডাউন বুধবার থেকে শুরু হয়েছে । কিন্তু এ লকডাউনে নানা অজুহাতে রাস্তায় বের হয়েছে মানুষ। বন্ধুকে ইফতার সামগ্রী গিফ্‌ট করতে, গাড়িতে গ্যাস ও তেল ভরতে, ঘুড়ি কিনতে, বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, লকডাউনের পরিবেশ দেখতে, ফাঁকা রাস্তায় ঘুরতে, স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর জন্য ঘরের বাইরে বের হয়েছে লোকজন। আবার কেউ কেউ এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গিয়েছেন ইফতারের বাজার করতে। অন্যদিকে, সড়কে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে পুলিশকে। ঢাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। সব শ্রেণির মানুষকে পুলিশের জেরার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কেউ কেউ পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

বিশেষ করে সাংবাদিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিচয় পত্র দেখানোর পরও নানা প্রশ্নের শিকার হয়েছেন।

গতকাল ঢাকার সড়ক ছিল রিকশার দখলে। ফার্মগেটে রিকশাচালক সবুজ জানান, মূল সড়কে রিকশা নিয়ে চললেও পুলিশ কিছু বলেনি। যাত্রী কম পাওয়া গেলেও তারা বেশি ভাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। ব্যাংকসহ যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের অফিসে যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কেউ কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটেছেন। সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে শিশু ও  কিশোরদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। দ্বিতীয়বারের লকডাউনে ঢাকায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে গলির ভেতরের দোকানগুলো খোলা ছিল।

সরকারের বিধিনিষেধে উন্মুক্তস্থানে কাঁচাবাজার বসানোর কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। ঢাকার বড় তিন টার্মিনাল মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এছাড়াও ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে কঠোর নজরদারিতে ছিল পুলিশ। শুধু সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহনগুলো ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। ঢাকার সড়কে যারা বের হয়েছিলেন তারা অনেকেই মুভমেন্ট পাস দেখাতে পারেননি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় কঠোর বিধি-নিষেধসহ বুধবার সকাল থেকে টানা ৭ দিনের লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লকডাউন কার্যকর বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ কাজ করছে। সাধারণ মানুষ পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, শক্ত না হলে লকডাউন কার্যকর  হবে কীভাবে?’

গতকাল দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত অধিকাংশ সড়ক ছিল ফাঁকা। সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল কঠোর অবস্থান। পুলিশ প্রহরা বসিয়েছিল। ফার্মগেট মোড়ে কয়েকজন পথচারীকে বিনা কারণে সড়কে বের হওয়া এবং মুভমেন্ট পাস না থাকার কারণে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বিধিনিষেধ না মেনেই ঢাকার গাবতলীর অনেক রেস্টুরেন্টে লোকজনকে বসে খেতে দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে পুলিশকে সোহেল নামে এক যুবককে মোটরবাইক থামাতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশের জেরায় সোহেল জানান যে, তার এক বন্ধু থাকেন কল্যাণপুরে। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি বের হয়েছেন। পুলিশ তাকে ধমক দিয়ে তার বাইক উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের কনস্টেবল হাবিবুর রহমান জানান, বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। এক ব্যক্তি সিএনজি অটোরিকশায় করে তার এক বড় ভাইকে  খেজুর গিফ্‌ট করবে বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তাকেও উল্টো পথে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজয় সরণির মোড়ে পুলিশ আড়াআড়িভাবে ব্যারিকেড বসিয়েছে। বিভিন্ন যানবাহন তারা সিগন্যাল দিয়ে থামিয়েছে। যারা অকারণে বের হয়েছেন তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। যেসব যানবাহনের কাগজের ত্রুটি আছে তাদের মামলা দেয়ার পাশাপাশি গাড়িও কয়েক ঘণ্টার জন্য জব্দ করা হয়।
এদিকে, রাজধানীর গাবতলীতে গতকাল সকাল ১১ টার দিকে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। আদালতের নেতৃত্ব দেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট   মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। তিনি জানান,  অনেকেই নানা অজুহাতে বের হচ্ছেন। যৌক্তিক কারণ দিতে পারছেন না। মুভমেন্ট পাসও নেই। কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল সকাল ১১ টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031