ফের মুখোমুখি এলাকাবাসী ও মাজারের বর্তমান দখলদার খাদিম অংশ সিলেটের শাহপরান (রহ.) মাদ্রাসা, মসজিদ ও মাজার পরিচালনা নিয়ে। এ নিয়ে গত একমাস ধরে উত্তেজনার পর মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকাবাসীর পক্ষে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
হযরত শাহপরান (রহ.) মাদ্রাসা, মসজিদ ও মাজার পরিচালনা নিয়ে কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসীর সঙ্গে বর্তমান মোতাওয়াল্লী মামুনুর রশীদ অংশের বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা ও পাল্টা মামলা চলছে। এ বিরোধের জের ধরে গত বছরের ২০ শে মে শাহপরান (রহ.) মসজিদে ইমাম নিয়োগ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে এলাকার আনছার মিয়া, ওয়ারিস আহমদ সহ শাহপরান লালখাঠঙ্গী গ্রামের ২৪ জন বাসিন্দা নতুন করে পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে সিলেট সদর ইএনওর কাছে অভিযোগ দেন।
ইউএনও অভিযোগ গ্রহন করে তদন্তের জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশনের কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেন। অভিযোগ দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘অস্থায়ী খতিব’ নিয়োগ দেওয়া হয়।
এবার রমজানকে সামনে রেখে আগে থেকেই উত্তেজনার আশঙ্কা করছিলেন এলাকাবাসী। এ কারনে গত ২৫ শে মার্চ শাহপরান (রহ.) থানার ওপেন হাউস ডে অনুষ্টানে মাদ্রাসা, মসজিদ ও মাজারের পরিচালনা নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিষয়টি পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফকে জানানো হয়। সিলেট সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা বদরুল ইসলাম সহ কয়েকজন এই বিষয়টি অবগত করেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে খলিল আহমদ গত শনিবার শাহপরান থানায় জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন- তারাবিহ নামাজের হাফিজ নিয়োগ নিয়ে কথা বলতে চাইলে বর্তমান দখলদার খাদিম অংশ সাড়া দেয়নি। উল্টো নিয়ে তারা অশালীন আচরন করেন। সম্প্রতি সময়ের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অবগত করে মঙ্গলবার সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাস্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকার বেলাল আহমদ, সুয়েব আহমদ সহ ১৬ জন বাসিন্দা। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে বিষয়টি অবগত করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকেও পত্র দেওয়া হয়।
এদিকে- স্মারকলিপি দেওয়ার কারনে বেলাল আহমদের উপর ক্ষুব্ধ হয় মাজারের বর্তমান দখলদার খাদিম অংশ। মঙ্গলবার রাতে বেলাল আহমদ যখন তারাবিহর নামাজ পড়ে মাজারের গদিঘরের সামনে আসেন তখন তার উপর হামলা চালায় এলাকায় কয়েকজন। বেলাল আহমদ বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ তলার ১১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তিনি জানান- খাদিম পক্ষের লাঠিয়াল আমাল, আজিজ, আহাদ, সাদিক, রঞ্জু, জিদান, জিহানের নেতৃত্বে তার উপর হামলা চালায়। এ সময় তারা লোহার রড, হকিস্টিক সহ দেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পরে এলাকার মানুষ অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনার পর এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে মাজার এলাকার অবস্থান নিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। শাহপরান থানার সুরমা গেইট তদন্ত ফাড়ির ইনচার্জ এসআই সারওয়ার আহমদ জানিয়েছেন- রাতে মাজার এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির জের ধরে উত্তেজনা ছিলো। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এখন দু’পক্ষই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এলাকার বদরুল ইসলাম জানিয়েছেন- ‘ঘটনাটির নিস্পত্তি করতে এক বছর আগে আমরা ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। পরে ভারপ্রাপ্ত খতিব নিয়োগ দেওয়া ছাড়াও ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেননি ইউএনও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করার কারনেই এবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’ শাহপরান (রহ.) মাজারের বর্তমান মোতাওয়াল্লী মামনুর রশীদ জানিয়েছেন- এলাকার কিছু লোক নামাজ শেষে বের হয়ে গালিগালাজ করার কারনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।