সরকারি বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কথা ছিল মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে। কিন্তু অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু প্রথম দিনেই দেখা গেছে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কারও তেমন আগ্রহ ছিল না। অধিকাংশ গণপরিবহনকে শুধুমাত্র সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী বহন করতে দেখা গেলেও বালাই ছিল না অন্য কোনো বিধিনিষেধের। দেখা গেছে বাসের চালক ও হেলপারদের মাস্কবিহীন অবস্থায়ও।

বাসের মধ্যেও যাত্রীদের মাস্কবিহীন অবস্থায় দেখা গেছে। তবে স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীর হাত পরিষ্কার করা,  ট্রিপের আগে পরে বাস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা, পরিবহন-শ্রমিক ও যাত্রীদের সবার মাস্ক পরিধান করা ও গ্লাভস নিশ্চিত করার বিধিনিষেধ চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে বাসের চালক ও যাত্রীরা একে অপরকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার ব্যাপারে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন।

তবে বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা বেশি ছিল। যাত্রীও ছিল বেশি। সরকারি বিধিনিষেধের শর্ত অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যানবাহন চলাচল করার কথা। তবে ঢাকায় অন্যান্য জেলার পরিবহন ঢোকা এবং ঢাকা থেকে যানবাহন অন্যান্য জেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। ঢাকার প্রবেশপথে পুলিশের প্রহরা ছিল কঠোর।

সরজমিন গণপরিবহনের স্বাস্থ্যবিধির মানার ব্যাপারে পুলিশকে গতকাল অনেকটা উদাসীন দেখা গেছে। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও গণপরিবহনের স্বাস্থ্যবিধির মানার ব্যাপারে তারা খোঁজ নেয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, মতিঝিল, পল্টন ও কাকরাইল এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটে বিহঙ্গ পরিবহনের বাসের হেলপার শামসুল তার মুখে মাস্ক কেন নেই জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘মাস্ক পরে যাত্রী ডাকা যায় না। অতিরিক্ত গরম। তবে
মাঝে মাঝে পরা হয়। তিনি অভিযোগ করেন- বারবার মানা করার পরও যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে গাড়িতে উঠছেন। আমরা কোনোভাবেই মানাতে পারছি না তাদের। বাসের  ভেতরে দেখা গেল অর্ধেক সিট খালি। তবে কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। সুমন নামে এক যাত্রী জানালেন, মিরপুর থেকে কিছু যাত্রীকে দাঁড় করিয়ে আনা হয়েছে। অর্ধেক যাত্রী ফার্মগেটে নেমে গেছে। আরো যাত্রী তোলার জন্য হেলপার বাইরে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। তবে লাব্বাইক পরিবহনের চালক আরমান জানান, বাস নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। যাত্রীরাই হাত স্যানিটাইজ করতে চায় না। ওই এলাকায় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের চিত্র এমনই দেখা গেছে। বাসের স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি ভয়াবহভাবে দেখা গেছে উত্তরা থেকে গুলিস্তানগামী ৩ নম্বর পরিবহনে।
ওই পরিবহনে দেখা যায়, সিট ছাড়াও অনেকই দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ গাড়ির দরজার আশেপাশে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ মাস্ক পরছেন আবার কারো মুখে মাস্ক নেই। বিষয়টি নিয়ে ৩ নম্বর বাসের চালক ও হেলপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। এ ব্যাপারে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, আমরা এক বছরে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারিনি। স্টার্টিং পয়েন্টে বাস স্যানিটাইজ করা বা পরিবহন-শ্রমিকদের মাস্ক পরানো এটা আমরা আসলে নিশ্চিত করতে পারিনি। যখন লকডাউন হয়, তখন এটা নিয়ে ভাববার বিষয় ছিল।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031