ইউরোপ ও বৃটেনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার করোনা ভাইরাসের টিকার সঙ্গে এবার জনসন অ্যান্ড জনসনের (জেঅ্যান্ডজে) টিকা নিয়ে। ইউরোপে আরো একজনের দেহে করোনা ভাইরাসের এস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পর তার রক্তে বিপজ্জনক অবস্থা দেখা গেছে।
ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স অথরিটি (ইএমএ) বলেছে, এস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পর ইউরোপে ৫ জনের দেহে রক্তের কৌশিক নালী ফেটে রক্ত মাংসপেশী এবং বিভিন্ন ক্যাভিটিজ বা গর্তে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুদ্র এসব জালিকা থেকে রক্ত নিঃসরিত হয়ে তা এসব স্থানে জমা হয়। ফলে আকস্মিকভাবে একজন রোগীর রক্তের চাপ কমে যায়। এর ফলে রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল।
বৃটেনের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ এরই মতে গত মার্চ পর্যন্ত এস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হয়েছিল যে ২ কোটি মানুষকে, তার মধ্যে তিন জনের দেহে রক্তের এমন বিস্তার লক্ষ্য করতে পেরেছে।
ওদিকে বৃটিশ প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড এবং তার উৎপাদনকারী সংস্থা এস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েও বৃটেনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার মানুষদের এই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। বৃটেনে এই বয়সসীমা ৩০ বছরের নিচে। অর্থাৎ এই বয়সসীমার কাউকে এস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে না। কারণ, এরই মধ্যে এই টিকা নেয়ার পর ব্রেনে এবং পেটে রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিরল ঘটনার রিপোর্ট করা হয়েছে।
ওদিকে ইএমএ জানিয়েছে তারা জেঅ্যান্ডজের টিকার ক্ষেত্রেও রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। এস্ট্রাজেনেকা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকা তৈরি করেছে জেঅ্যান্ডজেও সেই একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকা তৈরি করেছে। এই টিকা দেয়ার পর কমপক্ষে চারজনের মধ্যে রিবল রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। এর ফলে তাদের রক্তে প্লেটলেটস কমে যায় মারাত্মক পর্যায়ে। এর মধ্যে একজন মারা গিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা এই টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছে। সেখানে ১৮ জন ব্যক্তির মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় সতর্কতা হিসেবে এই টিকার ব্যবহার স্থগিত করা হয়েছে।
র্যালিহর পিএনসি অ্যারিনায় ওয়েক কাউন্টি কর্মকর্তারা বলেছেন, সেখানে যেসব মানুষের মধ্য প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তা জানা এবং অভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর কয়েক ঘন্টা পরে একই ঘটনায় কলোরাডোর একটি ক্লিনিক জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে কমপক্ষে ১১ জনের দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা। এ ঘটনা ঘটেছে কমার্স সিটির ডিকস স্পোর্টিং গুডস সেন্টারে। সেখানে এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জেঅ্যান্ডজে’র টিকা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান বেলজিয়ামের শাখা জ্যানসেন। এই টিকা বৃটিশ কর্মকর্তাদের পছন্দ যুবক শ্রেণির জন্য। কারণ, এই টিকার দুটি ডোজ প্রয়োজন হয় না। একটি ডোজেই এই টিকা সম্পন্ন হয়। এই টিকা অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। সামনের মাসগুলোতে তা সেখানে প্রয়োগ করার কথা রয়েছে। বর্তমানে এই টিকা পর্যবেক্ষণ করছে বৃটেনের ওষুধ বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা। এরই মধ্যে বৃটিশ সরকার এই টিকার ৩ কোটি ডোজ কেনার অর্ডার দিয়েছে।
ইএমএ বলেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না যে, এই টিকার সঙ্গে রিপোর্ট করা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। ওদিকে জেঅ্যান্ডজে বলেছে, রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়ে তারা অবহিত। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ডাটা পেতে এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য পেতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। র্যালিতে অবস্থিত ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র স্টেসি বিয়ার্ড বলেছেন, এই সাইট থেকে দিনে প্রায় ২ হাজার টিকার ছাড় দেয়া হচ্ছে। জেঅ্যান্ডজের টিকার মধ্যে সামান্যই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ফাইজার ও মডার্নার টিকার তুলনায় জেঅ্যান্ডজের টিকা খুব কমই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে করা হচ্ছে।