ঢাকা : আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরে ৬১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও প্রেসব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ (বিজিবিএম, পিবিজিএম, পিএসসি, জি)।জঙ্গিবাদ রোধে উত্তর-পশ্চিম রিজিয়নসহ সারাদেশের সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিজিবি’র মধ্যে জঙ্গিবাদ সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছর ২ জন বিজিবি সদস্যকে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ৫ বছর এবং অন্যজনকে প্রচলিত আইনে সাজা দেয়া হয়েছে।’প্রেসব্রিফিংকালে রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে জেএমবি’র সামরিক কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম এবং খালিদ হাসানের জঙ্গি বিরোধী তৎপরতা ও সীমান্ত জঙ্গি প্রতিরোধে বিজিবি কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। জঙ্গিরা যাতে বড় ধরনের নাশকতা ও সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে সীমান্ত অতিক্রম কিংবা ওপার থেকে কোন জঙ্গি দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেলক্ষ্যে সর্বোচ্চ সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া রংপুর অঞ্চলের জঙ্গি তৎপরতা বন্ধে সরকারের নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিজিবি’র মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে কোন শুদ্ধি অভিযান চলছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গত বছর ২ জনকে শনাক্ত করে একজনের ৫ বছর কারাদণ্ড ও অপর জনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তারা এখন কারাগারে রয়েছে। বিজিবি’র অভ্যন্তরে আর কেউ জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কিনা তা গোয়েন্দা দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বে অন্যতম একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় বর্তমান সরকার কঠোর ও অনমনীয়। বিজিবি সরকারের অঙ্গ। আমাদের মূল দায়িত্ব সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু রংপুর অঞ্চলের সাড়ে ৬’শ কিলোমিটারসহ সারাদেশের সীমান্তে এখনও কাঁটাতারের বেড়া কিংবা রাস্তা না থাকায় দুর্বলতা রয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পেশার মানুষ পাসপোর্ট দিয়ে এপার-ওপারে চলাচল করছে। তাদের মধ্যেও জঙ্গি থাকতে পারে। জঙ্গি বিষয়টি শনাক্ত করা দুরূহ কাজ। অতীতের তুলনায় সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঘন ঘন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আমিও ভারতে গিয়ে বিএসএফ প্রধানের সঙ্গে জঙ্গি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আমরা তাদের কাছে তথ্য চেয়েছি, কারা জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িত এবং কারা সীমান্ত অতিক্রম করছে। এ ব্যাপারে বিএসএফ’র পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের এই সরকার দায়িত্ব পালনের পর পিলখানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা শাহাদৎবরণ করেন। বর্তমান সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজিবিকে আধুনিক, দক্ষ এবং সময়ের প্রয়োজনে চাহিদাকে উপযোগী করে পুনর্গঠন করছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। বিজিবি তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। তার কারণেই, বিজিবি’র কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। পিলখানার ঘটনায় কালো অধ্যায় পেছনে ফেলে সকল মানুষের আস্থা অর্জন করেছে বিজিবি। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জাতীয় নির্বাচন, দেশের নৈরাজ্য, সহিংসতা প্রতিহতে সরকারের নির্দিশে বিজিবি আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে এবং তাদের দক্ষতা দিয়ে আস্থা অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিজিবি’র উত্তর-পশ্চিম রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহরীয়ার আহমেদ চৌধুরী, এনডিসি, পিএসসি, ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন ও প্রশিক্ষণ) কর্নেল মোহাম্মদ জিল্লুল হক, বিজিবিএম, পিএসসি, বিজিবি’র রংপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. জুলফিকার আলী, বিজিবিএম, অতিরিক্ত পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মুহীত উল আলম প্রমুখ। এ সময় বিজিবি রংপুর অঞ্চলের সকল সেক্টর কমান্ডারসহ সামরিক, বেসামরিক, পুলিশ প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।