প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে নির্ভয়ে করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি বলেন, দেশের মানুষকে করোনা মহামারি থেকে মুক্ত রাখতে ত্বরিত গতিতে টিকা আনা হয়েছে। সবাই সপরিবারে টিকা নিন। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে টিকা গ্রহণে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং আনসার ভিডিপির প্রতিটি সদস্যকে অনুরোধ করবো প্রতিটি মানুষ যাতে এই টিকাটা নেয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, অনেকে ভয় পায়, সুই ফোঁটাতেও ভয় পায়, কাজেই তারা যেন রোগাক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপটা নিয়েছি এবং সেখানে আপনাদের সহযোগিতা চাই। গতকাল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪১তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের সফিপুর আনসার ও ভিডিপি একাডেমির সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হন। অনুষ্ঠান থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ১৪০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যকে সাহসিকতা ও বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, টিকাদানের জন্য সরকার যেসব ডিজিটাল সেন্টার করেছে সেখানে গিয়েই সকলে নিবন্ধন করতে পারবেন। সেখানে গিয়ে নিজে এবং পরিবারের সকলে যেন টিকা নেয় তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত আনসার বাহিনীর মোট ১৯ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, আপনারা সুরক্ষিত থাকেন এবং টিকা নিয়ে নিজেদের আরো সুরক্ষিত করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেটাও আমরা চাই। বাল্যবিবাহ রোধ কল্পে আনসার সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে ভাষণে এটি অব্যাহত রাখার ও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি কাজ আপনারা করে যাচ্ছেন সেটা হচ্ছে বাল্যবিবাহ রোধ করা। যেটি আপনাদের করে যেতে হবে। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন- মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে যেন আমাদের দেশের যুবসমাজ সম্পৃক্ত না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা আপনারা রেখে যাচ্ছেন এবং এটা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ ব্যাপক কর্মসূচি আপনারাদের পালন করে যেতে হবে যাতে ছেলেমেয়েরা বিপথে না যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থান তৈরিতে এ বাহিনী সার্বক্ষণিক কাজ করছে। বিশেষ করে জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নে এ বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। সুবিশাল এ বাহিনীর অর্ধেক সদস্যই নারী। সমঅধিকারের ভিত্তিতে তাদের বিনামূল্যে আয়-বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত ‘আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক’ দেশব্যাপী ২৫৯টি শাখার মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ প্রদান করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক হতে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহপূর্বক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার জন্য ইতিমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা এ ব্যাংককে দেয়া হয়েছে এবং তারা প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা খরচও করেছেন। তিনি বলেন, এখান থেকে ৫ শতাংশ সুদে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত তারা ঋণ নিতে পারেন। আনসার ও ভিডিপি’র সদস্যরা বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার অগ্নিসন্ত্রাসের সময়ও তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় সারা দেশে জান-মাল ও রেল রক্ষায় আনসার বাহিনীকে সম্পৃক্ত করেছিলেন এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অগ্নি সন্ত্রাস মোকাবিলা করেছেন, সেজন্য তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু সরকারি দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিবেচনায় দেশের প্রতিটি রেঞ্জে একজন করে ভিডিপি সদস্যের বাড়ি বানিয়ে দেয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে একই বিবেচনায় প্রতি জেলায় ভিডিপি সদস্যকে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। এ সময় মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেক গৃহহীন-ভূমিহীনকে ঘর করে দেয়ার তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সকল ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতেও তার সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিববর্ষে দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। সবাই বিদ্যুৎ পাবে। প্রতিটি গ্রামে আমরা শহরের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। সকলের উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবো, ইন্শাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের এই মাসে মহান ভাষা আন্দোলনের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ১৫ই আগস্টের সকল শহীদ, ভাষা শহীদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার এবং মুক্তিযুদ্ধে আনসারের ৬৭০ জন বীর শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করুন: এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত ওয়াদা পূরণের কথা মাথায় রেখে মানুষের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিমসহ কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, এটাই যেন লক্ষ্য হয়। আপনারা জানেন যে, আমরা সমগ্র বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সারা বাংলাদেশেই কিন্তু এই উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। কারণ আমরা সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে এটাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে, দেশের কল্যাণে কাজ করলে করা যায়। এখানে জনগণের সমর্থনটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রহমতে জনগণের সেই সমর্থনটা আমরা পাই বলেই জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে এটাই চাইবো, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে আপনারা যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন আর আজকে যে শপথ নিলেন সেটা মাথায় রেখেই আপনারা মানুষের জন্য কাজ করবেন। ২৭শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হন।