এমন ভয়ানক ভিডিও চিত্র দেখানো হয়েছে বুধবার গত ৬ই জানুয়ারি মার্কিন আইনসভা ক্যাপিটল হিলে সশস্ত্র হামলা ও অভ্যুত্থান ঘটনার ভয়াবহতা ও আগে দেখা যায়নি। কিভাবে অল্পের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স,স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসি, সিনেটর সহ অনেক আইনপ্রণেতা প্রাণে রক্ষা পান তা উঠে এসেছে এসকল ভিডিও চিত্রে। এসব দেখে অনেকেই শিউরে উঠেছেন। অস্ত্রধারী হামলাকারীরা প্রায় তাদের নাগালের মধ্য চলে এসেছিল। আর এসব ঘটনার দায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিতে হবে বলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শিত ফুটেজের বেশির ভাগই ছিল আইনসভা ক্যাপিটল হিল ভবনের নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণকৃত।
সিনেটে প্রদর্শিত ভিডিও ও ছবিতে দেখানো হয় কি ভাবে ক্যাপিটল হিলে হামলার পটভূমি তৈরী করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কত ভয়ানকভাবে ক্যাপিটল ভবনে হামলা করা হয়। কিভাবে হামলা কারীরা হত্যার উদ্দেশে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসি সহ ট্রাম্প বিরোধীদের খুঁজতে থাকে। হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল যে করে হোক ইলেক্টোরাল ভোটের সার্টিফিকেশন বন্ধ করে দেয়া।
কিভাবে সিক্রেট সার্ভিস ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের নিরাপদ স্হানে সরিয়ে নেয়।হামলাকারীরা মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এবং ন্যান্সি প্যালোসিকে মাথার ঘিলু গুলি করে উড়িয়ে দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। সিনেটে যখন ইমপিচমেন্ট ম্যানেজাররা একে একে এইসব যুক্তিতর্ক তুলে ধরছিলেন তখন তাদের বক্তব্যের সমর্থনে বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছিল এসকল ঘটনার প্রমান স্বরূপ ভিডিও চিত্র এবং ঘটনার সাথে সম্পর্কিত ট্রাম্পের একের পর এক টুইটের বিবরনী।তারা শুধু ৬ জানুয়ারির ন্যাক্কারজনক ঘটনা নয়, ট্রাম্পের নির্বাচন থেকে শুরু করে এপর্যন্ত সবকিছুর তথ্য উপাত্ত প্রমাণসহ তুলে ধরেন। এসময় সিনেট ফ্লোরে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছিল। অধিকাংশ সিনেট সদস্য মনোযোগের সাথে দেখছিলেন উপস্হাপিত প্রমাণাদি। কংগ্রেসের সদস্য হাউসের ম্যানেজাররা তাদের যুক্তিতর্ক উপস্হাপন কালে কেউ কেউ আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ছিলেন।
স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে ক্যাপিটল হিলে অভিশংসন আদালতের সভাপতি, মার্কিন সিনেটের প্রবীণতম সদস্য প্যাট্রিক লেহির সভাপতিত্বে আদালতের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
দ্বিতীয় দিনের অভিশংসন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ,দেখা গেছে ৬ই জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থক উগ্রবাদীদের সহিংস কার্যক্রমের নানা বিষয়। তারা তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স এবং স্পীকার ন্যান্সী পেলোসির নাম ধরে খোঁজ করছিলো। উগ্রবাদীদের হামলা থেকে কয়েক মুহূর্তে সিনেটর মিট রমনি এবং মাইক পেন্সের রক্ষা পাওয়ার ভিডিও দেখা গেছে।
প্রসিকিউশনে বলা হয়েছে সহিংসতায় দায়ে গ্রেপ্তার করে লোকজন হলফনামা দিয়ে ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ত ও মাইক পেন্স ও ন্যান্সি পেলোসিকে হত্যার লক্ষ্যে খোঁজ করেছে। সহিংসতায় যোগ দেয়া লোকজন কতৃক এফবিআই’র কাছে দেয়া বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে অভিশংসন আদালতে।
প্রধান অভিশংসন প্রসিকিউটর কংগ্রেসম্যান জ্যামি রাসকিন নেতৃত্বে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা ও অভ্যুত্থান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই হয়েছে। জ্যামি আদালতে দেয়া তার বক্তৃতায় বলেছেন, উপস্থাপিত সব তথ্য প্রমাণে বলার কোন উপায় নেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনার ‘পাশে দাঁড়ানো’ একজন দর্শক ছিলেন মাত্র।
৬ই জানুয়ারি ঘটনায় দেশের ট্রাম্প ‘কমান্ডার ইন চিফ’ হিসেবে কাজ করেছেন বলে তিনি আদালতে দেয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেন।জেসন মিলার সহ রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অভিশংসন আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্পের খণ্ডিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব বক্তব্য উপস্থাপন করে ট্রাম্পকে ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য অযোগ্য করার ডেমোক্র্যাট দলের এমন চেষ্টা সফল হবে না বলে তারা বলছেন। অভিশংসন বিচার নয় , রাজনৈতিক বিচার কাজ চলছে বলেও রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে অনুযোগ করা হচ্ছে।
ডনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র নিউজম্যাক্স টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ৬ই জানুয়ারির বক্তৃতার যে অংশে ‘দেশপ্রেমিকদের শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন তা বাদ দিয়ে খণ্ডিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
অভিশংসন আদালতের স্তগিত কার্যক্রম স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার শুরু হবে।সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হলেন একমাত্র প্রেসিডেন্ট যার বিপক্ষে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগে মার্কিন সিনেটে অভিশংসন আদালতে বিচার চলছে।