যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ বিষয়ক নির্বাহী আদেশ অনুমোদন করেছেন । এর আওতায় আসবেন সেদেশের সামরিক নেতারা, তাদের পরিবারবর্গ এবং তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ১০০ কোটি ডলারের তহবিল ব্লক করা থাকবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় পুলিশ এক নারীকে গুলি করে। সেই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে নেয়া হয়েছে আইসিইউতে। তার যখন এমন অবস্থা তখন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

গুলিবিদ্ধ ওই নারীর নাম মায়া থাউই থাউই খাইং। তিনি মঙ্গলবার বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভে জলকামান, রাবার বুলেট ও সরাসরি গুলি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে খাইংয়ের মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। আজ তার জন্মদিন। এদিন আইসিইউতে নিঃসঙ্গ, একা জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি।

এর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত বাইডেন প্রশাসন। তারা দাবি করছে মিয়ানমারের অভ্যুত্থান প্রত্যাহার করে নিয়ে বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে মুক্তি দেয়া হোক। এ বিষয়ে বাইডেন বলেছেন, মিয়ামনারের জনগণ তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরছে এবং বিশ্ব সেটা দেখছে। প্রয়োজন হলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বিক্ষোভে যখন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তখন গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চাকারী এসব মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়। এর প্রত্যাহার চাই আমরা। জো বাইডেন বলেন, তার প্রশাসন অবরোধের প্রথম দফা টার্গেট এ সপ্তাহেই আরোপ করতে পারে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বেশ কিছু নেতাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর অপরাধে। জো বাইডেন বলেন, আমরা কঠোরভাবে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছি। জব্দ করছি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ, যা থেকে মিয়ানমারের সরকার সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে জনগণকে দেয়া স্বাস্থ্যসেবা, নাগরিক অধিকার গ্রুপ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। গত মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই জো বাইডেনের প্রথম অবরোধের মতো কঠোর অবস্থানে যাওয়া।
ওদিকে চলমান প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যেও সেনাবাহিনী ঘেরাও ও তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের। কারণ, তারা সামরিক জান্তার ‘নির্বাচনে জালিয়াতির’ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ওদিকে মায়া থাউই থাউই খাইংয়ের বোন মায়া থা তোয়ে নোয়ে বলেছেন তিনিও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তবে তার বোন মায়া থাউই থাউই খাইংয়ের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তার ভাষায়- হৃদয়টা ভেঙে যাচ্ছে। সংসারে আর আছে শুধু মা। বাবা মারা গেছেন এরই মধ্যে। চার ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার বড়। মায়া থাউই থাউই খাইং ছিল সবার ছোট। মাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। আমাদের মুখে কোনো কথা নেই।
এর আগে মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছিল নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। ১৯৮৮ সালে নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৩০০০ মানুষ। ২০০৭ সালে হত্যা করা হয় কমপক্ষে ৩০ জনকে। এ দুটি সময়েই হাজার হাজার মানুষকে জেলে আটক রাখা হয়।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031