ভর্তি পরীক্ষা নতুনভাবে হতে যাচ্ছে । ২০টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মত হয়েছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের।এবার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর পরও সকলে অংশ নিতে পারছেন না গুচ্ছ পদ্ধতির এই ভর্তি পরীক্ষায়। বাছাই করা শিক্ষার্থীরাই বসতে পারবেন এই পরীক্ষায়। ১৪ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা ছাড়াই পাস করেছেন। এছাড়াও দ্বিতীয়বার এই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক ভর্তি-ইচ্ছুক।
গত বৃহস্পতিবার ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) বসেছিলেন পরীক্ষায় বিষয়ে বৈঠকে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সরাসরি বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়নি তাতে।
শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলেন। তিনটি সিদ্ধান্ত হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেবে, তারপর এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যে ঘোষিত যোগ্যতা অনুযায়ী, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আবেদন করবেন। এ জন্য কোনো টাকা লাগবে না। এরপর আবেদন করা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই (স্ক্রিনিং) করে নির্ধারিত সংখ্যক প্রার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। যারা ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য যোগ্য হবেন, সেটি তাদের জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীরা ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবার আবেদন করবেন এবং তারাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষায় থাকছে নেগেটিভ মার্কিং।
কিন্তু কীভাবে হবে এই বাছাই? জানা যায়, বিভাগ অনুযায়ী নির্ধারিত জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করার পর, তাদের দুই বোর্ড পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ অনুযায়ী নির্বাচন করা হবে। যাদের জিপিএ ভালো, তারাই ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন। যদি একই জিপিএ একাধিক শিক্ষার্থী পেয়ে থাকেন, তখন বিষয়ের নম্বর বিবেচনা করা হবে। সেখানে যে এগিয়ে থাকবে, সেই ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাবে। এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা নেই তাদের।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভিসি) অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, এই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নেয়া হবে। এই পরীক্ষাগুলো এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গুচ্ছ-পদ্ধতিতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে সেসব পরীক্ষায় অংশ নেবে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা কোনো পরীক্ষা হবে না। তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী বিভাগ পরিবর্তনের জন্য উল্লেখ করতে পারবেন।
দেশের সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকেই নেয়া হয় গুচ্ছ-পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা। এবার প্রকৌশল তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা। রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একযোগে নেবে এই পরীক্ষা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছে আসবে কি-না এ নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা, বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত তারা যুক্ত হননি তাতে।
সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে হবে পরীক্ষা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ১৩ তারিখের মধ্যে এই সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিগণ বসবেন। এই আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শাহীদূর রশিদ ভূঁইয়া।
খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও এই তিন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সদস্য ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জুনের প্রথম সপ্তাহের কথা ভাবছি। আমাদের যেহেতু লিখিত পরীক্ষা হবে এই জন্য খাতা দেখার বিষয় আছে। যদি প্রথম সপ্তাহে না হয় আমরা চেষ্টা করবো দ্বিতীয় সপ্তাহে নেয়ার। আর এই পরীক্ষা এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়েই হবে বলে তিনি জানান।
একই কথা বলেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। তিনি বলেন, জুনের প্রথম সপ্তাহের বিষয়ে কথা চলছে তবে এখনো আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহের বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম কবে শুরু হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানানো হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তর থেকে। তারা জানান, গুচ্ছ-পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঠিক হওয়ার পরেই হয়তো আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত হয়তো নেয়া হবে।
এদিকে একমাস পিছিয়ে গেছে মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা। আগামী ২রা এপ্রিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও ৩০শে এপ্রিল বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবারও পূর্বের নিয়মেই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এক্ষেত্রে আবেদনের শর্ত এবং এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ’র উপর ধার্যকৃত ২০০ নম্বরও কমানো হচ্ছে না। এমনকি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের ৫ ও ৭ নম্বর কর্তনের বিষয়টিও বহাল থাকছে।
আর বড় চার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান সম্প্রতি বলেছেন এপ্রিল কিংবা মে মাসে নেয়া হতে পারে। আর রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। একইসঙ্গে এখনো ঠিক হয়নি কীভাবে হবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।