ঢাকা : গত ২৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এর আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, জামিন পাওয়া জঙ্গিরা পুনরায় উগ্রবাদে জড়াতে পারে। মাত্র চার মাসের মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে গেছে এক নারী জঙ্গিসহ অন্তত ২৮ জন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন জেএমবির সদস্য। জামিন পেয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুনরায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত জামিন পেয়ে এসব জঙ্গি কারাগার ছেড়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমকালকে বলেন, জামিন পাওয়া জঙ্গিরা পরবর্তী সময়ে উগ্রবাদে জড়াচ্ছে কি-না, এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে।জামিন পেয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে সিকান্দার আলী নকী, ওমর শরীফ, আবু বকর সিদ্দিক, রাকীব হোসেন, আহসান উল্লাহ, আশিস, মোমিনুর রহমান, মো. সানি, সফিকুল ইসলাম সফিক, রউফুর রশীদ, তামিম আহমেদ, সাফায়াত জামিল, নুরুল আমিন, সাদিক সজীব বর্মণ, নুসরাত জাহান লিপি প্রমুখ। সিকান্দার নকী ২০১৬ সালের ২ জুন জামিন পায়। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। রাজধানীর তুরাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে যাওয়া ওমর শরীফ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য। তার বিরুদ্ধে আদাবর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। আবু বকর সিদ্দিকও হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে হাজারীবাগ থানায়। আবু বকর ও হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য রাকিব হোসেন জামিন পায় গত ২ মে। আহসান উল্লাহ নামে জেএমবির এক সদস্য জামিন পেয়েছে গত বছরের ১৫ এপ্রিল। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। আশিস নামে হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য জামিন পেয়েছে গত ১৬ এপ্রিল। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। মোমিনুর রহমান নামে হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা আছে। সে জামিনে বেরিয়েছে গত ১৫ এপ্রিল। হিযবুত তাহ্রীরের আরেক সদস্য সানি জামিন পেয়েছে গত ১৪ এপ্রিল। তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মামলা রয়েছে। জেএমবির সদস্য শফিকুল ইসলাম জামিন পেয়েছে গত ৯ এপ্রিল। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ ও রামপুরা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। হিযবুত তাহ্রীরের আরেক সদস্য রউফুর রশীদ জামিন পেয়েছে গত ৭ এপ্রিল। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা রয়েছে। কলাবাগান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি জেএমবির সদস্য সাফায়াত জামিল জামিন পেয়েছে গত ৩১ মার্চ। পল্টন থানার মামলার আসামি জেএমবির সদস্য নুরুল আমিন জামিন পেয়েছে গত ২৯ মার্চ। হিযবুত তাহ্রীরের সাদিক সজীব বর্মণ জামিন পেয়েছে গত ২৯ মার্চ। তার বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য নুসরাত জাহান লিপি জামিন পেয়েছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, জামিন লাভের পর এসব জঙ্গির ওপর তেমন কোনো নজরদারি নেই। দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকায় তাদের সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমুদ্দীন রাহমানীর, জেএমবির প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি এনায়েতুল্লাহ জুয়েলসহ অনেক উগ্রপন্থির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন মতবাদ, পরিকল্পনা ও শলাপরামর্শ হয়। জামিনে থেকে তারা জঙ্গি সংগঠনের নেটওয়ার্ক বিস্তার, পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থ সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ, রিক্রুটিং ও আটক অন্য জঙ্গিদের জামিনে ভূমিকা রাখছে কি-না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে জসীমুদ্দীন রাহমানীকে ছিনিয়ে নেওয়া, ভিভিআইপি ও ভিআইপি ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে জেএমবি নেতা আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ, সদস্য নায়েম আলী, সিকান্দার আলী নকী, মাহমুদ ইবনে বাশার, মাসুম বিল্লাহ, ফুয়াদ হাসান ও আলী আহম্মেদকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ছয়জন বর্তমানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি। তারা নিজেরা প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ করে থাকে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কারাবিধি ভঙ্গ করে জেএমবির এক আসামির সঙ্গে তার স্বজনকে চারবার সাক্ষাৎ করানো হয়। জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের স্বজন বা স্বজন পরিচয়ে অন্য কেউ সাক্ষাৎ করেছে কি-না তা কোনো কারাগারেই যাচাই করা হয় না। শুধু সাক্ষাতের সময় পরিচয়পত্রের কপি রাখা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশাপাশি সারাদেশের অন্য কারাগারে আটকা জঙ্গি সদস্য, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত এমন আসামিদের জামিন, স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আদালতে পাঠানো ও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করার ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি আরোপ ও নজরদারি করতে সংশ্লিষ্টদের এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |