দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ট্যাক্স দিতে ‘জটিল’ ও ‘কঠিন’ প্রক্রিয়ার কারণে দেশে দুর্নীতি বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন । তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে ট্যাক্স দেয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ‘জটিল’ ও ‘কঠিন’। আর এ কারণেই দেশে দুর্নীতি বাড়ছে।

দুদকের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে ইকবাল মাহমুদ একথা বলেন। এর আগে রবিবার প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ট্যাক্স ফাইলের জটিলতার কারণে মানুষ ট্যাক্স দিতে ভয় পায়। এই জটিলতাকে কমাতে পারলে দেশের মানুষ ট্যাক্স দিকে আগ্রহী হবে, মানুষ ট্যাক্স দেবে। আমি বলবো দেশের আঠারোর্ধ্ব সব বয়সী নাগরিকের একটি ট্যাক্স ফাইল খোলা উচিত। ট্যাক্স রিটার্ন জিরো হলেও সমস্যা নেই।’

কেউ কালো টাকা সাদা করলে দুদকের কোনো আপত্তি নেই উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তবে ঘুষের বা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত উপার্জন সাদা করাটা অনৈতিক। কেউ যদি টাকা সাদাও করেন সেই ক্ষেত্রে কোন উৎস থেকে আয় করেছেন সেটা তাকে চিহ্নিত করতে হবে।’

ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকি খাতের দুর্নীতি ঠেকাতে দুদক হিমশিম খাচ্ছে জানিয়ে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের হিসাব পাওয়া গেলেও নন-ব্যাংকিং খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ কারণে পিকে হালদারের মতো লোকেরা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে।’

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে কমিশনের দায়ের করা মামলায় জরিমানা করা হয় ৩৪৯৭ কোটি টাকা ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৯ টাকা। আর বাজেয়াপ্ত করা হয় ৪৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৪ টাকা।

দুদক ২০১৯ সালে চার্জশিট দাখিল করে ২৬৭টি। এসব চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে গেল বছর মামলা করেছে ৩৬৩টি। তবে গত চার বছরে তুলনামূলকভাবে মামলা দেয়া ও চার্জশিট দেয়া উভয় ক্ষেত্রেই কমেছে। আর গত পাঁচ বছরে তুলনামূলক সাজার হার বাড়লেও ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সাজার হার স্থিতিশীল রয়েছে। এই দুই বছরই সাজার হার ৬৩ ভাগ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৬৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৫৪ শতাংশ আর ২০১৫ সালে ৩৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে সরাসরি এবং ডাকযোগেসহ ২১ হাজার ৩৭১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে এক হাজার ৭১০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিন হাজার ৬২৭টি মামলা পাঠানো হয় আর বাকি ১৬ হাজার ৩৪টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়।

অন্যদিকে দুর্নীতি প্রতিরোধে বার্ষিক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য, ঔষধ, সড়ক যানবাহন ব্যবস্থা, নকল-ভেজাল ও নিষিদ্ধ পণ্য সরবরাহ, নিষিদ্ধ পলিথিন আগ্রাসন, নদী দখল, দুর্নীতিমুক্ত রেজিস্ট্রেশন সেবা, ইটভাটা স্থাপন সংক্রান্ত, নৈতিকতা বিকাশে স্কাউটিং বিএনসিসি কার্যক্রম, সরকারি পরিসেবায় মধ্যস্বত্তভোগী, ওয়াসা, আয়কয়-কাস্টমস ও ভ্যাট সংক্রান্ত, বাংলাদেশে রেলওয়ে, স্থায়ী সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠনসহ আরও বেশ কিছ উল্লেখযোগ্য খাতের বিশেষ সুপারিশ করা হয়।

এসব খাতের পাশাপাশি আর্থিক খাতের মতো কিছু খাতের দুর্নীতি রোধে কমিশন থেকে এসব সুপারিশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। আপিল বিভাগ নির্দেশ দিলেই এসব সুপারিশ সরকার কার্যকর করতে পারবে বলে মনে করেন কমিশন চেয়ারম্যান।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031