আমরা গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই এবং মনে করি, গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন । আমাদের যারা গবেষণায় নিয়োজিত তাদের সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে একটি সরকারি মতবিনিময়ের ইচ্ছা আমার রয়েছে। ভবিষ্যতে সেই ধরনের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে আমি জানতে পারি আপনারা আরো কীভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি অর্জনে প্রকাশিত ‘১শ’ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাউল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। সফল কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম নিজন্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প খরচে অধিক মাত্রায় ফসল উৎপাদন কীভাবে করতে পারি সেটা বিবেচনায় এনে মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে সমগ্র বাংলাদেশের এলাকা ভিত্তিক একটি ‘জোন ম্যাপ’ তৈরি করা দরকার। তিনি এ সময় সরকারি চাকুরে বিজ্ঞানীদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে বিশেষ প্রণোদণার আওতায় আনা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের দেশের কৃষিপণ্য যাতে মানসম্পন্ন করা যায় তার জন্য আরো পরীক্ষাগার তৈরি করা দরকার। সেইসঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষাগারও নির্মাণ প্রয়োজন। তিনি গবেষকদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, একদিনে গবেষণা শেষ হয়ে যায় না। দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়। তবে, চাকরির একটা বয়স নির্দিষ্ট করা রয়েছে, যার পরে আর চাকরি করা যায় না। কিন্তু গবেষণায় সম্পৃক্ত সরকারি চাকুরেদের জন্য আমি একটা কথাই বার বার বলেছি, এই গবেষকদের কীভাবে আমরা প্রণোদণা দিতে পারি যাতে গবেষণার ফসল তারা হাতে পাওয়া পর্যন্ত থাকতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরজন্য তার সরকার একবার উদ্যোগ নিলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই এই সুযোগটা নিতে চাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অফিসের পিয়ন, আর্দালি, দারোয়ান থেকে শুরু করে কেউ আর বাদ যান না। এটাতো হয় না। এটাই আমাদের দেশে সমস্যা। কাজেই গবেষণায় যারা সম্পৃক্ত তাদের জন্য এটা কীভাবে করা যেতে পারে? শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়স সীমা বৃদ্ধি করায় সেখানে আর সমস্যা হচ্ছে না। কাজেই, আমরা ইনস্টিটিউটগুলোতে কীভাবে এই প্রণোদনাটা দিতে পারি। সেই পরামর্শটা আপনাদের কাছ থেকে চাচ্ছি। কারণ, আমাদের কৃষি গবেষকদের আমরা আরো সুযোগ দিতে চাচ্ছি। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ধান, পাট, ইক্ষু চা, রেশম, তুলা, বনজ সম্পদ এবং মৎস্য সম্পদের থেকে নির্বাচিত ১শ’টি প্রযুক্তি এটলাসে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, রয়েছে প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগে বেশকিছু সাফল্যের গল্প। যা হতে পারে কৃষি উন্নয়নে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দেশ-বিদেশের পাঠকের সুবিধার্থে এই এটলাসে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তির মধ্যে ১শ’টি প্রযুক্তির আজকে যে এটলাস প্রকাশ করা হলো তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সকলের জন্য একটা অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হিসেবে থাকবে এবং কৃষিভিত্তিক এই দেশকে আত্মনির্ভরশীল হতে আরো সহায়তা করবে। দেশীয় ফলমূলের ওপর আরো গবেষণার আহ্বান জানিয়ে নতুন নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতেও বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।