স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে গোপন করেছিল প্রস্তুতকারক অক্সফোর্ড করোনা ভাইরাসের টিকার পরীক্ষায় বড় এক ভুলের কথা। এক্ষেত্রে ডোজের পরিমাণগত দিক দিয়ে একটি ভুল করা হয়। কিন্তু সে সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। প্রায় ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভুল ডোজ প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালিয়েছে অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকা। কিন্তু ভয়াবহ এই ভুল ধরা পড়ার পরও তারা বিষয়টি চেপে যায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ সম্পর্কিত ডকুমেন্ট হাতে পেয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করেই তারা এ খবর দিয়েছে। ৮ই জুন লেখা একটি চিঠিতে টিকায় অংশগ্রহণকারীদের ওপর টিকার ডোজ নিয়ে তালগোল পাকিয়ে দেয়ার কথা জানানো হয় ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষকদের।

ভিন্ন ভিন্ন ডোজ প্রয়োগ করলে কেমন কাজ করে তা জানানো হয় গবেষকদের। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পরীক্ষার প্রধান তদন্ত বা অনুসন্ধানকারী অক্সফোর্ডের প্রফেসর অ্যানড্রু জে. পোলার্ড। গত ২৪ শে ডিসেম্বর রয়টার্স রিপোর্ট করে যে, অক্সফোর্ডের গবেষকরা ভুল পরিমাপে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ওপর অর্ধেক ডোজ টিকা প্রয়োগ করেছে। তবে পোলার্ডের ওই চিঠিতে কোনো ভুলের কথা স্বীকার করা হয়নি। এমনকি এই চিঠিতে এটাও প্রকাশ করা হয়নি যে, গবেষকরা বৃটিশ মেডিকেল নিয়ন্ত্রকদের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন। এরপর নিয়ন্ত্রকরা অক্সফোর্ডকে বলেছে, পূর্ণ মাত্রায় ডোজ গ্রহণ করতে আরেকটি টেস্ট গ্রুপকে এ পরীক্ষায় যুক্ত করতে। তবে কর্তৃপক্ষের এমন ভুলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কারো স্বাস্থ্যগত কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, বৃটেনের অক্সফোর্ড আবিষ্কৃত এই টিকার চাহিদা বেশ। এই টিকা পুরো বৃটেনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একে সবচেয়ে কম দামি টিকা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু অক্সফোর্ডের পরীক্ষায় ডোজ ত্রুটির কারণে এবং বয়স্ক মানুষের ওপর এই টিকার কার্যকারিতা বিষয়ক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য এই টিকার দিকে নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতার অধীনে অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠিটি হাতে পেয়েছে রয়টার্স। চিকিৎসা বিষয়ক কমপক্ষে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরে তা শেয়ার করা হয়েছে। তারা সবাই বলেছেন, ইঙ্গিত মিলেছে যে, গবেষকরা তাদের পরীক্ষাকালে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে স্বচ্ছতা রক্ষা করেছেন বলে মনে হয় না।

ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় কোনো রকম পরিবর্তন হলে সব রকম তথ্য স্বেচ্ছাসেবকদের জানানোর নিয়ম আছে। এ বিষয়ে অক্সফোর্ডের মুখপাত্র স্টিভ প্রিটচার্ড বলেছেন, স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর অর্ধেক ডোজ টিকা প্রয়োগ করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে আমরা জানি যে, ডোজ পরিমাপে কিছুটা বৈষম্য ছিল এবং এ নিয়ে আমরা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা বলছি না যে, ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভুল হয়েছে।

মুখপাত্র যা বলেছেন তা হলো কোনো ভুল হয়নি এক্ষেত্রে। তবে গত বছর অক্সফোর্ড এবং টিকা তৈরির ক্ষেত্রে তার অংশীদার এস্ট্রাজেনেকা গত বছর যে ডকুমেন্ট সরবরাহ করেছে তার সঙ্গে তার বক্তব্য বিরোধপূর্ণ। গত ডিসেম্বরে রয়টার্স রিপোর্ট করে যে, ১৭ই নভেম্বরে অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালাইসিস প্লান’  নিয়ে একটি রিপোর্ট করে রয়টার্স। পরে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয় বৃটিশ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানচেটে। এতে ডোজ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যকে বড় ভুল বলে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এস্ট্রাজেনেকার এক মুখপাত্র।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031