সংসদ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ব্যবস্থা নিতে পারে- এমন অভিমত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে চার বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের এই পদ থাকা-না-থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।
কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে কুয়েতের একটি আদালত গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) চার বছরের জেল এবং ৫৩ কোটি টাকার বেশি জরিমানার দণ্ড দেয়। এই ঘটনার পর জাতীয় সংসদে তার সদস্যপদ থাকবে কি না- তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কুয়েত সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য না পাওয়ার কারণে সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়ার পরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো সাংসদের বিরুদ্ধে কোনো সাজার রায় হলে সেটি আমলে নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি বা আবেদনের প্রয়োজন বাধ্যতামূলক নয়।
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘কোনো মামলায় সাজা রায় দেয়ার পর সে বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে জানানো আদালতের দায়িত্ব নয়। গণমাধ্যমের খবরও আমলে নিয়ে কোনো সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা তদন্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারেন স্পিকার।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী কোনো সাংসদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন-জনিত কারণে দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য হবেন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না।’
সেটি না হলেও সংসদ সচিবালয় বা স্পিকার অভিযোগ বা সাজার বিষয়ে জানার পর সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা সংসদ নেতার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই আইনজীবী বলেন, ‘সংসদ সচিবালয় যখন জানতে পারলো, স্পিকার জুডিশিয়াল নলেজে এলো, তখন ওনারা সুয়োমুটো মোশন নিতে পারেন। পার্লামেন্টের প্রসিডিংসের মধ্যে স্পিকারের এই ক্ষমতা আছে।’
এছাড়া কোনো সদস্য সংসদে ৯০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলেও তার সদস্যপদ বাতিল হওয়ার বিষয়টি আইনে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাপুলের সাংসদ পদ বাতিলের বিষয়ে সংসদের এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘সাজার খবর আমলে নিয়ে ওনার সদস্যপদ এখনই খারিজ করে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে একটা ডিরেকশন দিয়ে ওনার পদটা শূন্য করা উচিত।’
কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় আসার পর রবিবার (৩১ জানুয়ারি) সংসদের প্রথম অধিবেশন বসলেও এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংসদ আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, দেশ কিংবা দেশের বাইরে কোনো সাংসদের বিরুদ্ধে সাজার রায় হলে তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা থাকে না। একই কারণে সাংসদ পদে থাকারও যোগ্যতা থাকে না তার। পার্লামেন্টারিয়ান কনভিকটেড হয়েছেন। উনার সংসদে আসার আর সুযোগ নাই।’
সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচনের অযোগ্য। নির্বাচনই যদি না করতে পারেন তাহলে নির্বাচিত হয়েও এমপি থাকার নৈতিক এখতিয়ার থাকে না।’ এ কারণেই এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আলোচনা চলছে বলেও জানান আব্দুল মতিন খসরু। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করে স্পিকার প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’
তবে বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেছেন যে, শুরু থেকেই সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি সংসদে ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না যে কী ব্যবস্থা এই সংসদ নেবে। কারণ শুরু থেকেই একটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ছিল সংসদের।’
রুমিন বলেন, ‘যেহেতু আমরা দেখেছি শুরু থেকেই সংসদে এক ধরনের ডিনায়ালের মধ্যে ছিলেন, এখন তো আসলে ডিনায়ালের মধ্যে থাকবার আর কিছু নেই।’
তবে এখন যেহেতু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং সাজাও দেয়া হয়েছে তাই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আর কোনো বাধা থাকলো না বলে মনে করেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, তার সাংসদ পদ থাকা না থাকার পুরো বিষয়টি এখন সংসদের ওপরই নির্ভর করবে। সংসদ চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
গত বছরের ৬ জুন কুয়েতে নিজের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হন। পরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের কোটায় তার স্ত্রীও এমপি হন। -বিবিসি বাংলা