অপহরণের বিষয়টি পুলিশ বা অন্য কাউকে জানালে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখাতো অপহরণকারীরা। অপহরণের পর চক্রের নারী সদস্যদের দিয়ে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি তুলে রাখতো অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা, যাতে অপহৃত ব্যক্তি মুখ খুলতে না পারে।এমন একটি চক্রের ছয় সদস্য ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের হাতে গ্রেপ্তার হলে পুলিশ এসব বিষয় জানতে পারে।
শনিবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ অপহরণ চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের একটি দল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাদেকুল ইসলাম, ইফরান, মোহাম্মদ আলী রিফাত, কুতুব উদ্দিন, মাছুম রানা ও গোলাম রাব্বি।
রবিবার বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তারদের বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, গত বছরের ২৯ নভেম্বর রাত সোয়া ৯টার দিকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা মাইক্রোবাসে দিয়ে কৌশলে আনোয়ারুল ইসলামকে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা অপহৃতের স্ত্রী ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। মুক্তিপণ পাওয়ার পর তারা আনোয়ারুলকে উত্তরায় ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করে অপহৃতের পরিবার। পরে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, অপহরণের ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে চক্রটির সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। এই চক্রটি রাজধানীতে গত কয়েকদিনে চারজনকে অপহরণ করেছে। তার মধ্যে আনোয়ারুল একজন। প্রাথমিকভাবে অপহরণের শিকার কেউই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেনি। তারা যখন দেখল গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগ পাওয়ামাত্র একের পর এক অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করছে, তখন আস্থা পেয়ে অভিযোগ নিয়ে ছুটে আসে পুলিশের কাছে। ইতোমধ্যে চারজন অপহৃতই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, অপহরণের পর এই চক্রের নারী সদস্যদের দিয়ে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি তুলে রাখা হতো, যাতে ভিকটিম মুখ খুলতে না পারে। যদি এ বিষয়ে পুলিশ অথবা অন্য কারো কাছে অভিযোগ করে তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখাতো। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে তারা চুপ থাকতো। এছাড়াও, অস্ত্রের মুখে ভিকটিমদের জিম্মি করে রাখা হতো। যার ফলে তারা ভয়ে মুখ খুলতো না।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব ও বিমানবন্দর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।