আমি অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়া এন্ডোমেন্টে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম।কয়েক মাস পরে ক্রিস এবং স্যান্ডি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। স্বাস্থ্য বিষয়ক সমাজসেবক আমার বন্ধু রবার্ট কে রস এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছিলেন।
এন্ডোমেন্টের সদর দপ্তর ছিল খুবই সুন্দর এবং অত্যাধুনিক। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল থাকার সময় এখানে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। বিশেষ এই দিনটিতে যে বিষয়ের ওপর আলোচনা সে বিষয়ে দু’ চারজন ভেবে থাকতে পারেন এটা হলো অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়ক এজেন্ডা। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম প্রাথমিক স্কুলগুলোতে সততার বিষয়ে কথা বলতে এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে।
আমি যখন প্রথমবার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যাত্রা শুরু করি তখন আমার এক্সিকিউটিভ টিমকে বলেছিলাম প্রাথমিক স্কুলে সততার চর্চাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে।
আমি যখন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি পদে দায়িত্ব পালন করেছি তখন আমার বেশির ভাগ কার্যক্রমের মধ্যে ছিল অপরাধ দূর করতে তাদের জীবনে এর প্রভাবকে গুরুত্ব দেয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্যাক অন ট্র্যাক কর্মসূচি। এর পুরোটাই ছিল যারা সাজাপ্রাপ্ত তরুণ যুবক তাদের বন্দি হিসেবে কারাগারে কীভাবে সাহায্য করা যায় এবং আমি একই সঙ্গে সচেতন ছিলাম কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে কমিউনিটিতে যেখানে শিশুরা নিরাপদ থাকবে এবং নতুনভাবে তাদের জীবন শুরু করতে পারবে। আমি শিশুদের জীবনের সেইসব মূল পদক্ষেপগুলো চিহ্নিত করতাম যা আমার অফিস ভিন্নভাবে দেখতো।
এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণির মধ্যে যে ফারাক সেগুলোকে সংযুক্ত করে একটি গবেষণা শুরু করি। তৃতীয় গ্রেডের শিক্ষার্থীদের রিডিং দক্ষতার গুরুত্ব নিয়ে প্রথম যে ফারাক সেখানে জোর দেয়া হয়। গবেষণায় জানতে পারি তৃতীয় গ্রেডে পড়ার সমাপ্তি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ঐ সময় পর্যন্ত এ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়তে হয় তা শিখতে পারে। চতুর্থ গ্রেডে একটি শিফট রয়েছে এ সময়কালে শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে রিডিং শিখতে হয়। যদি ছাত্ররা রিডিং পড়তে না পারে তবে তারা শিখতে পারবে না এবং তারা পেছনে পড়ে যাবে। তারা মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর পিছিয়ে যাবে। এটা তাদেরকে জোর করে এমন এক দারিদ্র্যে ঠেলে দেয় যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। কিন্তু এ সময় তারা চার ফুটের মতো লম্বা হলেও তাদের জন্য সম্ভাবনার দরোজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমার কাছে মনে হতে থাকে এ কারণেই শিশুরা ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
আমি শহর এবং সান ফ্রান্সিসকো কাউন্টির ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার দিকে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। এটি ছিল সরকারের ভেতর এবং সরকারের বাইরে এসব এলাকার নেতাদের ইস্যু। তাই আমাদেরকে কি করতে হবে এ বিষয়ে অনেক কিছু করার ছিল। আমরা যখন তথ্য উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করি তখন দেখতে পাই যে, শতকরা আশি ভাগেরও বেশি বন্দি এরা হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়া যারা। আরলিন অ্যাকারম্যান নামের এক চমৎকার নারী যিনি ডিস্ট্রিক্ট স্কুল সুপারিন্টেন্টেড। হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের বিষয়ে কথা বলতে তার সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করি।
তিনি আমাকে জানালেন যে, তাদের হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের শতকরা বড় একটি অংশ সপ্তাহের পর সপ্তাহ এমনকি মাসের পর মাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস মিস করেছে। আমার মনে হলো এ বিষয়টিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধীর সঙ্গে এ বিষয়টির সম্পর্ক বেশ পরিষ্কার। শিক্ষার্থীরা যখন অনেক ছোট থাকে এবং তারা ক্লাস মিস করতে থাকে তখন আপনি তাদেরকে পথ দেখাতে পারেন। এইসব অবিশ্বাসী শিশুরাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এবং তাদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন গ্যাং। তাদের হাতে পরেই এরা অল্প বয়সে মাদক বহনকারী হয়ে ওঠে। আবার তারাই সহিংসতার হোতা অথবা সহিংসতার শিকারে পরিণত হয়। যদি আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া এইসব শিশুর প্রতি মনোযোগ না দেই তাহলে পরবর্তীতে তাদেরকে জেলখানায়, হাসপাতালে অথবা মৃত অবস্থায় দেখতে হবে আমাদের।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে