‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক শীর্ষক প্রকল্পের নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদের বাইরের অংশের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটিতে প্রকল্প কর্মকর্তারা পছন্দের প্রতিষ্ঠান বেঁধে দিচ্ছেন। টেন্ডার বহির্ভূত এই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের বেশিরভাগ অর্থ পরিশোধ হবে অগ্রিম ও নগদে। এই কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ভ্যাট ও অগ্রিম কর পরিশোধ করবে না। সরাসরি কাজ না করেও ঠিকাদারদের ভ্যাট ও অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে। এমনকি বিদ্যুৎ খরচও ঠিকাদারদের বহন করতে হবে। মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছর ১৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
ঠিকাদারদের বলা হয়েছে, এই কাজগুলোর মান উপ-প্রকল্প পরিচালক নিজেই তদারকি করবেন। ফলে কাজের মান খারাপ হলেও মসজিদ নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিংবা সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগের কিছুই করার থাকবে না। আবার এর দায় নির্মাণ সংশ্লিষ্টদেরই বহন করতে হবে। মসজিদ নির্মাণের দরপত্র বহির্ভূত এই তিন কাজ যদি মৌখিকভাবে বেঁধে দেয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে করাতে হয় তাহলে কোনো রকম ভ্যাট, অগ্রিম কর এবং বিদ্যুৎ খরচ না করেই প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা নিয়ে যাবে। আর এসব খাতের খরচ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে। এই বিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কবে পাবে তাও নিশ্চিত নয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির উপ-পরিচালক ফেরদৌস-উজ-জামান ছুটির দিনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। প্রকল্প পরিচালক নজিবুর রহমান বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটির জন্য যারা যোগ্য তাদের দিয়েই করা হচ্ছে। এ যাবৎ ৩/৪টি প্রতিষ্ঠান এই কাজে নিয়োজিত হয়েছে। এটি টেন্ডার বহির্ভূত কিনা তা গণপূর্তই বলতে পারবে। আর বিদ্যুৎ বিল খুব নগণ্য আসতে পারে। এটা নিয়ম মেনে করা হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) সূত্র জানায়, মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির ৭৯টি চারতলা মডেল মসজিদ হবে ৬৪টি জেলা শহর ও ৪ সিটি করপোরেশন এলাকায়। প্রতিটির আয়তন হবে প্রায় দুই লাখ ৮২ হাজার বর্গমিটার। প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ‘বি’ ক্যাটাগরির মসজিদ হবে ৪৭৬টি। আর ৬১ হাজারের বেশি আয়তনের ‘সি’ ক্যাটাগরির মসজিদ হবে ১৬টি। মসজিদে প্রতিদিন ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারীর নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। লাইব্রেরিতে প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামী বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। মসজিদগুলো থেকে বছরে ১৪ হাজার হাফেজ বের হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে এসব মসজিদে। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে। হজ পালনে আগ্রহীদের জন্য করা হবে ৫০ শতাংশ ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে ফাঁকা থাকবে নিচতলা। এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।