ঢাকা : আজ রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের মিলনায়তনে জিটিসিএলের প্রস্তাবের উপর গণশুনানি শেষে এই সুপারিশ করা হয়।গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানির (জিটিসিএল) প্রস্তাবিত চার্জ শূন্য দশমিক ১৫৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ২৯৬৫ টাকা করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। যা বর্তমান চার্জের চেয়ে ৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।তবে জিটিসিএল শূন্য দশমিক ৩৬৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল।
তবে এই জিটিসিএলের প্রস্তাব ও মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের তীব্র বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই, ভোক্তা অধিকার আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। কোম্পানির ব্যয় নির্বাহে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কৌশল পরিহার করে গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রেখে কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের পরামর্শ দেন তারা। গ্যাসের দাম শিল্প-বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য তাঁরা সবাই বিইআরসির কাছে অনুরোধ করেন।
গ্যাস খাতের বিভিন্ন কোম্পানির দেওয়া দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর এই গণশুনানি আয়োজন করেছে বিইআরসি।শুনানি পর্যায়ক্রমে চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। আজ গ্যাস বিতরণ চার্জ এবং ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবের উপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
শুনানির শুরুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ শূন্য দশমিক ১৫৬৫ টাকা থেকে ১৩৪ শতাংশ বাড়িয়ে নূন্যতম শূন্য দশমিক ৩৬৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
প্রস্তাবের বিষয়ে জিটিসিএলের পরিচালক (অর্থ) মুশফিকুর রহমান বলেন, গত বছর যে সকল বিষয় বিবেচনায় বিদ্যমান ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছিল ইতোমধ্যে তার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নতুন পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে নতুন সম্পদ এবং সম্পদের অবচয় বৃদ্ধি, রিটার্ন অন ইক্যুইটি বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, নতুন বেতন কাঠামোতে জনবল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যাংক সুদের হার হ্রাস পাওয়ায় সূদ আয় হ্রাস এবং প্লান্টসমূহে কনডেনসেট না আসায় অন্যান্য আয়ও হ্রাস পেয়েছে। তাই বর্তমান ট্যারিফে চলতে থাকলে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে কোম্পানি লোকসানে দাঁড়াবে।
এ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম, পেট্রোবাংলার সাবেক কর্মকর্তা সালেক সুফী, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।
শুনানিতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, জিটিসিএলের প্রস্তাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। চলতি অর্থবছরেও মুনাফা হবে। তবে কিছুটা কমবে। এ রকম লাভজনক কোনো কোম্পানির পণ্য বা সেবার দাম বাড়ানোর বিইআরসির আইনের পরিপন্থী। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য তাদের অর্থ প্রয়োজন হলে তা সরকারের উন্নয়ন বাজেট থেকে দিতে হবে। এ জন্য গ্যাস সঞ্চালনের মূল্যহার বাড়নোর কোনো যুক্তি নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, জিটিসিএল ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রকল্পে যে বিনিয়োগ করেছে, তা মুনাফাসহ ফেরত পাবে কোম্পানিটি। কাজেই সে জন্য সাধারণ গ্রাহক কেন এখন বেশি দাম দেবে? তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। কিন্তু দেশে সেই হারে কমানো হচ্ছে না। আবার গ্যাসের দামও বাড়ানো হলে উৎপাদন ও রপ্তানি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশের প্রবাসী-আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রবনতা দেখা দিয়েছে। এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে যদি রপ্তানি বাণিজ্যেও সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। বিইআরসির উদ্দেশে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই (গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর) তো গ্যাসের দাম বাড়ানোর হয়েছে। এখন আর বাড়াবেন না।
শুনানি পরিচালনা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান এনআর খান। এসময় কমিশনের সদস্য মাকসুদুল হক ও রহমান মুর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
গত মার্চ মাসে গ্যাস খাতের সব কোম্পানি বিইআরসিতে সব গ্রাহকশ্রেণির জন্যই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করে। প্রস্তাবে গৃহস্থালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া এক চুলার জন্য এক হাজার ১০০ টাকা এবং যানবাহনে ব্যবহƒত সিএনজির দাম ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং এক চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল।