মনির বেশ বিরক্ত লাগছে। রাত বাড়ছে। কিন্তু পুরুষ মানুষটির যাওয়ার নাম নেই।  ছোট্ট একটি বাসা। মাত্র দুটি রুম। এরমধ্যেই স্বামী আজাদের ওই বন্ধু প্রায় দু’ঘন্টা হলো বসে আছে। মনির স্বামী আজাদ নিজেই তাকে বারবার বেড রুমে ডেকে নিয়ে আসছে। অন্যান্য দিনের মতোই আজাদ নেশাগ্রস্ত।

মনিকে চোখা রাঙানি দিচ্ছেন বারবার। বলছেন, আমার এই বন্ধুটি বেশ ভালো। তুমি ওর সঙ্গে গল্প করো। আমি কাজটা শেষ করে আসছি।

মনি বাধা দেন। এতো রাতে কিসের কাজ। তবুও বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে চলে যান আজাদ। ফিরেন ঘন্টা খানেক পরে। এটা অবশ্য নতুন না। এর আগেও কয়েকবার এরকম ঘটনা ঘটিয়েছেন আজাদ। মনি পা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। এভাবে নিজের বউকে অন্যের কাছে তোলে না দিতে অনুনয় করেছেন। কোনো কথা শুনেননি আজাদ। উল্টো চোখ রক্তবর্ণ করে শাসিয়েছেন। বলেছেন, এছাড়া ভাত জুটবে না। সে যা বলে তাই করতে হবে। এ নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলেছেন পর্যন্ত।
আজাদের বন্ধু পাশের রুমে। লোকটা সবই বুঝতে পারে। তবু তারও মনুষ্যত্ববোধ জাগে না। বারবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। আবার আসেন। মনিকে তিনি বলেছেন, যে কোনোভাবেই হোক আমি আপনাকে চাই। কখনও কখনও পাশের রুমে রাত কাটান তিনি। আজাদের সংসার চলে তার টাকায়।
মনি ভেবে পাচ্ছিলেন না কি করবেন। ডিভোর্সী নারীকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না। এমনকি নিজের পরিবারও। কেউ হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবে না আজাদ তার সঙ্গে কী করছে। বাধ্য হয়েই আজাদের বন্ধুকে মেনে নেন মনি। অবশ্য তার আগে বন্ধুতা গড়ে তোলেন। এবার নিজেই রাতবিরাতে আজাদের বন্ধুকে বাসায় ডেকে আনেন।
স্বামী আজাদ থাকেন পাশের রুমে। আর তার স্ত্রীর মনির সঙ্গে রাত্রিযাপন করেন তার বন্ধু। মাঝে-মধ্যে স্বামীর ওই বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে যান মনি। এভাবে কয়েক মাস। শারীরিক সম্পর্ক আর বন্ধুতা থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। সংসারে এখন অভাব নেই। আজাদের বন্ধুর টাকায় বাসা ভাড়া, নিত্যপণ্য কেনা থেকে চলে সব।
এরমধ্যেই হঠাৎ মনি নিখোঁজ। খোঁজ নেই আজাদের ওই বন্ধুরও। কয়েদিনের মধ্যে ডিভোর্স লেটার পান আজাদ। কথাগুলো বলছিলেন আজাদ (ছদ্মনাম) নামের চল্লিশ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন তিনি। আজাদ জানান, শেষ পর্যন্ত মনি তার ওই বন্ধুকে বিয়ে করেছেন। বন্ধুটি ব্যবসায়ী। তাদের এক সন্তানও হয়েছে। মাদক কেড়ে নিয়েছে আজাদের স্ত্রী, সংসার সব।
আজাদ জানান, একটি বেসরকারি কোম্পানীতে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন তিনি। শুরুতে সিগারেট ও গাঁজায় আসক্তি ছিলো। কয়েক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে মাঝে মধ্যেই ইয়াবার আসরে যোগ দিতেন কল্যাণপুরের এক বাসায়। ধীরে ধীরে ইয়াবা তাকে গ্রাস করতে থাকে। কর্মক্ষেত্রে টার্গেট পূরণে বারবার ব্যর্থ। কাজে অমনোযোগী। চাকরি চলে যায়। স্ত্রী মনি গৃহবধূ। ধারদেনা করে সংসার চলছিলো। বরিশালের গ্রামের বাড়ি থেকেও টাকা এনে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এভাবে আর পারছিলেন না। নিজের স্ত্রীকে ঠেলে দিয়েছিলেন অনৈতিক পথে। আজাদ কথা বলছিলেন আর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিলো।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031