ঢাকা : আওয়ামী সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার দলের কমিটি কত জনের করবে এটা তার ব্যাপার। অতীতেও এ রকম বিশাল কমিটি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তারা কার্যক্রর ভূমিকা রাখতে পারেনি।’ শনিবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। এত বড় কমিটি কখনও ঘোষণা করেনি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল। স্বভাবতই এ নিয়ে আলোচনা আছে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের মতে. বিএনপির এতবড় কমিটি ঘোষণা হাস্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, এই কমিটি কোনভাবে রাজনৈতিকভাবে কার্যকর হবে না। এটা স্পষ্ট বিএনপি তাদের দলের ভেতর কোন্দল সামাল দিতে এই কাজ করেছে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হবে। কারণ, এখন অন্যরা বলবে, কেন আরও বড় করে তাদেরকে নেতৃত্বে নেয়া হলো না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘এ দলের কোন সাংগঠনিক জ্ঞান বা কাঠামো নেই। যেসব রাজনৈতিক দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে তারা কেউই এতো বড় কমিটি ঘোষণা করেনি।’
কমিটি ঘোষণার সময়ই গণমাধ্যম কর্মীরা বড় আকারের কমিটি করার কারণ জানতে চান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। তিনি বলেন, বাস্তবতার কারণেই কমিটি বড় হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও এখন মূল দলে ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। তাদেরকে জায়গা করে দিতেই এত নাম দেয়া হয়েছে।
জঙ্গি তৎপরতায় অভিযুক্ত তিন নেতাকে কমিটিতে রাখার সমালোচনা
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে তিনজন জঙ্গি হামলা মামলার আসামি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচার চলছে আবদুস সালাম পিন্টু ও মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের। আর রাজধানীতে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যা মামলায় এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি এবং বিদেশি নাগরিক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে অন্তর্ভুক্ত করায় জঙ্গি তৎপরতায় বিএনপির সংশ্লিষ্টতাই প্রমাণ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি প্রমাণ করলো তারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের লালন করছে। তাদের বিষয়ে আমাদের এত দিনের অভিযোগ আবারও প্রমাণ করলো তারা।’
নতুন কমিটিতে আবদুস সালাম পিন্টু ও মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পিন্টু কারাগারে আর কায়কোবাদ বিদেশে পলাতক।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় এই দুই নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। ওই ঘটনায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয় এবং আহত হয় শতাধিক। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই ঘটনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পুনঃতদন্তে পিণ্টুকে আসামি করা হয়। আর কায়কোবাদ আসামি হন মহাজোট সরকারের আমলে করা অধিকতর তদন্তে।
মামলার আসমি মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে এই হামলায় দুই নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। মুফতি হান্নান বলেন, জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসা থেকে নেওয়া ১৫টি গ্রেনেড দিয়ে ওইদিন শেখ হাসিনার জনসভায় হামলা চালানো হয়। ওই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপির সে সময়ের সংসদ সদস্য কায়কোবাদের মাধ্যমে জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে জোট সরকারের প্রতিনিধি ও তারেক রহমানের পরিচয় হয় এবং হাওয়া ভবনে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বৈঠক হয়।
গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যার ঘটনায় আটক চারজন পুলিশকে এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই খুন করেছেন তারা। পুলিশ জানিয়েছে, এই বড় ভাই বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম। তাকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগেই কাইয়ুম বিদেশে পারি জমিয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আসামি ছাড়া বিএনপি নেতা পাবে কই। অপরাধমুক্ত, সুস্থ-স্বভাবিক রাজনীতির লোক কোথায় পাবে তারা?’
তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালাচনা গায়ে মাখছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আসামি তো আমিও। তাহলে এ জন্য বিএনপি কি আমাকে বাদ দিয়ে দেবে? তারা (পিন্টু, কায়কোবাদ, কাইয়ুম) তো আগের কমিটিতেও ছিল। এবারও রাখা হয়েছে। এখানে তো কোনো নতুনত্ব নেই।