চট্টগ্রাম : উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করার সাত বছর পরও বন্দরনগরীকে প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর। তারা রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে বিশেষ করে তরুণদের দলে টানার চেষ্টা করছে।

দেশজুড়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর নিষিদ্ধ হিযবুতের নাম আসছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীরা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে তাদের একটি বড় অংশই শুরুতে এই সংগঠনের কর্মী ছিল। মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যা চেষ্টার সময় হাতেনাতে আটক যুবক ফাহিমও নিজেকে হিযবুতের সদস্য বলেছেন পুলিশের কাছে। জানান, সংগঠনের নেতাদের নির্দেশেই ওই অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি ও তার দল।

এটা স্পষ্ট যে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা হিযবুত তাহরীরকে নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি। নানা কৌশলে গোপন তৎপরতা চালু রেখেছে তারা। আসলে চট্টগ্রামে তাদের তৎপরতাকে সেভাবে গোপনও বলা যাচ্ছে না। কখনও কখনও প্রকাশ্যে মিছিলও করে তারা।

প্রশাসন কড়া নজরদারির কথা বললেও চট্টগ্রাম মহানগরী ও এর বাইরের বিভিন্ন উপজেলায় ঝটিকা মিছিল ছাড়াও লিফলেট বিতরণ, দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়ে হিযবুতের কর্মীরা জানান দিচ্ছে তাদের অস্তিত্বের কথা। এসব নানা প্রচারপত্রে তারা বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা বলে তরুণদেরকে সে তৎপরতায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদেরকেও একইভাবে উস্কানি দেয়া হচ্ছে এসব প্রচারপত্রে।

বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনও বলছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্র হিযবুতের কর্মী হিসেবে কাজ করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনায় নিজস্ব কর্মী বাহিনীও রয়েছে সংগঠনটির। ছাত্র ছাড়াও সংগঠনটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যাংকারসহ নানা পেশার মানুষ।

বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই উচ্চবিত্ত শ্রেণির তরুণদেরকে সংগঠনে টানার চেষ্টা করে তৎপরতা চালিয়ে আসছে হিযবুত তাহরীর। চট্টগ্রামে উচ্চবিত্ত তরুণদের পাশাপাশি অসচ্ছল ছাত্রদেরকে সংগঠনে ভেড়াতে আর্থিক সহযোগিতার তথ্যও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গোয়েন্দারা বলছেন, হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন গোপন বৈঠক করে। প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে একজন করে দলপ্রধান। তারা বৈঠকে উপস্থিত হয়ে সাংগঠনিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা দেন। নগরীতে মাঝে মধ্যে সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়। এসব সেমিনারে সংগঠনের আদর্শে বিশ্বাসী উচ্চশিক্ষিত বিভিন্ন পেশার কর্তা ব্যক্তিরা অতিথি হয়ে সংগঠনের আদর্শ ও উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে বয়ান দিয়ে যান।

তালিকাভুক্ত ৩৮ জনকে খুজঁছে পুলিশ

পুলিশ বলছে, তাদের তালিকাভুক্ত এই ৩৮ জনের সবাই আত্মগোপনে থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের মধ্যে অন্তত একজন দাঁতের চিকিৎসক, এক জন আইনজীবী এবং একজন প্রবাসী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এরা হলেন মিরসরাইয়ের কামরুল হাসান (২৭), ইফতেখারুল ইসলাম (১৯), সালাউদ্দিন (২০), আনোয়ারা উপজেলার লোকমান হোসেন (২৩), বাঁশখালীর মুফতী হারুন বিন ইযহার, জুনায়েদ হোসেন (৩৪), আমজাদ হোসেন (২৪), লোহাগাড়ার আতিক আবরাহ হিমেল (২৩), সাতকানিয়ার আহসান আলী রিয়াজ, ইমতিয়াজ হোসেন, নুর মোহাম্মদ, আন্দরকিল্লার প্রকাশনা সংস্থার কর্মচারী শাহাদাত হোসেন (১৯), শিক্ষানবীস আইনজীবী ফয়সাল রহমান লিমন, বোয়ালখালীর হাবিবুন নবী প্রকাশ, আশিকুর রহমান, রায়হানুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, এমদাদুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়ার শরিফুল আউয়াল, রাউজানের এস এম জুলহাস নাইম, পটিয়ার ফরমান উল্লাহ, সীতাকু-ের আব্দুল কাদির, আব্দুর রহমান রাহেল, আলাউদ্দিন প্রকাশ, রুবেল, জুলফিকার আলী, মিনহাজ উদ্দিন রুবেল, তানজীব হোসেন, কাজী এরফান ইকরাম ও ডেন্টাল সার্জন মোরশেদুল আলম, ফটিকছড়ির ছাফায়াত ইয়াছিন ও তার ভাই সোহান ইয়াছিন ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমান প্রবাসী শাহেদ হোসাইন শাকের, হাটহাজারীর ইসমাইল হোসেন, মোবারক হোসেন, আতিকুর রহমান, ইমতিয়াজ সেলিম, মুনতাসির আলম রাজিব।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরসহ অন্যান্য জঙ্গিসংঠনের অপতৎপরতা রুখতে সিএমপি নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন হিযবুত তাহরীর কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে’।

(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/প্রতিনিধি/জেডএ/ডব্লিউবি)

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031