সিলেটের হকাররা রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ালেন । আপাতত বেঁধে দেয়া স্থানগুলো থেকে তারা সরে গিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করা স্থান হকার মার্কেট মাঠে বাজার গড়ে তুলেছেন। রাস্তায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না পেয়ে ক্রেতারাও এখন যাচ্ছেন সেখানে। সিলেটবাসীর একটি বড় দুঃখ ছিল নগরীর ফুটপাথ দখল। এ কারণে ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছিল নগরীর কোর্টপয়েন্ট, বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, জিন্দাবাজারসহ কয়েকটি এলাকা। গত দুই দশক ধরে রাস্তার দু’পাশের ফুটপাথ দখল করে হকাররা হরেকরকমের ব্যবসার দোকান বসিয়েছিলেন। এক সময় তারা রেজিস্ট্রারী মাঠও দখলে নিয়েছিলেন।
কয়েক বছর আগে সিলেটের দলিল লেখকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠায় রেজিস্ট্রারী মাঠ ছাড়ে হকাররা। এরপর তারা এসে অবস্থান নিয়েছিল রাস্তায়। কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে তারা মাছবাজারও গড়ে তোলে রাস্তায়। এতে করে প্রথম প্রতিবাদী হয়ে উঠেন সিলেটের মার্কেট ব্যবসায়ীরা। পরে সচেতন মহলও এসে এই প্রতিবাদে যুক্ত হন। সিটি নির্বাচন এলেই হকার ইস্যুটি প্রাধান্য পেতো। হৈ-চৈ শুরু হতো সুধী মহলে। হকারদের কারণে সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ছিলেন বিব্রত। কারণ সিলেটের আদালত পাড়া, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা পরিষদের সামনে পুরোটাই ছিল হকারদের দখলে। এ নিয়ে আইনজীবীরা হয়েছিলেন আদালতের দ্বারস্থ। সব মিলিয়ে সিলেটের হকার সমস্যাটি চরম আকার ধারণ করেছিল। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হকার সমস্যার সমাধানে নতুন পথ ধরলেন। সেখানে তিনি নগরীর হকার অধ্যুষিত এলাকার ফুটপাথকে নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করলেন। তারের জঞ্জাল সরিয়ে নিলেন মাটির নিচে। রাস্তাকে করলেন দুই লেনের। মাঝখানে দিলেন আইল্যান্ড। কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেন। হকার উচ্ছেদে সিলেটের পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফের সহযোগিতা চাইলেন। পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে হকার পুনর্বাসনের প্রস্তাব করা হলো। এতে রাজি হলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি হকারদের জন্য বরাদ্দ করলেন নগরীর লালদীঘিরপাড় ময়দান। সেখানে প্রায় এক হাজার হকারকে পুনর্বাসন করলেন। এরপর ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে সিলেটের পুলিশ প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হলো। সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট ও আশেপাশের এলাকায় এখন আর হকার নেই। সবাই চলে গেলেন লালদীঘির মাঠে। সেখানে হকাররা ব্যবসা করছেন। সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। তদারকি করা হচ্ছে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এখন প্রতিদিন রাস্তা পরিদর্শন করেন। নতুন করে জিন্দাবাজার এলাকাকেও রিকশামুক্ত করলেন। জিন্দাবাজার এলাকার চারটি প্রবেশমুখেই রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এখন জল্লারপাড় গলির মুখ, হাওয়াপাড়া গলির মুখেই আটকে দেয়া হচ্ছে রিকশা। ব্যবসায়ীরা এতে সন্তুষ্ট। তবে- পণ্যবাহী যান চলাচলের অনুমতি দিতে তারা মেয়রের দ্বারস্থ হয়েছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি তিনি বিবেচনায় রাখবেন। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, নাগরিক ভোগান্তি বিবেচনায় সিসিক সাইনবোর্ড ও মাইকিং করে সিসিকের পক্ষ থেকে মডেল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ?গত শনিবার থেকে এই সড়কে রিকশার চলাচল বন্ধে মাঠে কাজ করেন সিসিকের কর্মীরা। কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা পয়েন্টে সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ প্রায় প্রতিদিনই এসব এলাকা পরিদর্শন করছেন। রাস্তা পরিদর্শনকালে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমরা নগরবাসীর সহযোগিতায় এই সড়কের ফুটপাথ থেকে হকারদের সরিয়ে নিয়েছি। এখন আমরা এই সড়কটিকে একটি মডেল সড়কে রূপান্তরের জন্য কাজ করছি। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে অযান্ত্রিক বাহনের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণার পর গত দু’দিন আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আশা করি মহানগর পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং নগরবাসীর সহযোগিতায় এই সড়কে পুরোপুরি বন্ধ থাকবে রিকশা চলাচল।’ তিনি বলেন, ‘যৌথ অভিযানে অনেককেই দেখেছি রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবো। নগরবাসীকে রাস্তায় চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে গাড়ি পার্কিং থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নগরের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে বাইলেন থেকে কেউ যেন রিকশা, হাতাগাড়ি, ভ্যান ও লেগুনা নিয়ে না আসেন সে আহ্বানও জানান সিসিক মেয়র। ঝুঁকি এড়াতে রাস্তা দিয়ে না হেঁটে চলাচলকারীদের হকারমুক্ত ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার আহ্বান জানানো হয়।’