এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মূলত জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই বাড়ি ছেড়েছে। উগ্রপন্থীদের ভাষায় এ বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি কথিত ‘জিহাদ’-এর অংশ। তারা ধরেই নিয়েছেন এ পথে তাদের মৃত্যু হতে পারে। স্বামীর মৃত্যুর পর ওই মানছুরাকে কে বিয়ে করবে সেটা আগে থেকেই ঠিক করা। একইভাবে বিভিন্ন সময়ে হামলা করতে গিয়ে কিংবা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গিদের কেউ নিহত হলে তার স্ত্রীকে কে বিয়ে করবে, সেটাও আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ সংগঠনের এসব সদস্য কৌশলে নারীদের ঘরছাড়া করে। তাদের ভাষায় একে বলে ‘হিজরত’। এ কথিত হিজরত করা নারীদের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অনেক খবর রাখে। আর এ কারণেই স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের নিজেদের (জঙ্গি) নেটওয়ার্কের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। এটি নিশ্চিত করতেই কোনো নারী জঙ্গির স্বামী (জঙ্গি) পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা নিহত হলে তার দায়িত্ব কে নেবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। একইভাবে ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে আবার তৃতীয় জনের (জঙ্গি) কাছে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও ওই জঙ্গি নারীর দ্বিতীয় স্বামী বিয়ের পরপরই নির্ধারণ করে রাখে মৃত্যুর পর কার সঙ্গে তার স্ত্রীর বিয়ে হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী চাইলেও অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। সে অন্যত্র বিয়ে করলে তাদের নেটওয়ার্কের অনেক খবর বাইরে ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থেকেই তারা এমনটি করে থাকে।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে রোজিনা বেগম, সাজিদা আক্তার ও জান্নাতি ওরফে জেমিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাজিদার স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক নজরুল জেএমবির সদস্য। তিনি পঞ্চগড়ের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এতে জানা গেছে, কোনো জঙ্গির মৃত্যু হলে, তার স্ত্রীকে কে বিয়ে করবে বা তার দেখাশোনা কে করবে সেটা আগে থেকেই সিস্টেম করা থাকে। বর্তমানে যেসব সদস্য গ্রেফতার হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখা গেছে।
গত ২৪ জুলাই সিরাজগঞ্জের মাছুমপুর এলাকা থেকে জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হচ্ছে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার বাদুল্লাপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী নাদিয়া তাবাসুম রানী (৩০), বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার ফুলকট গ্রামের খালিদ হাসানের স্ত্রী হাবিবা আক্তার রুমা (২২), একই উপজেলার পরানবাড়িয়া গ্রামের মামরুল ইসলাম সরদারের স্ত্রী রুমানা আক্তার রুমা (২১) ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পোচাদহ গ্রামের সুজন আহম্মেদ বিজয়ের স্ত্রী রুমা খাতুন (১৯)। এ চার নারীকেও জিজ্ঞাসাবাদে উল্লিখিত তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।
সিরাজগঞ্জের ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আটক নারীদের স্বামীরা জেএমবির সদস্য। তারা কোনো কারণে নিহত হলে বা গ্রেফতার হলে তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, আটক নারীরা জেএমবির সক্রিয় সদস্য। মে মাসে তারা ওই বাড়িটি ভাড়া নেয়। গ্রেফতারের পর তাদের আইনশৃংখলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
– See more at: http://www.teknafnews.com/%e0%a6%ae%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87/#sthash.KLxxwrfG.dpuf