ঢাকা : বিএনপি এখন আবদ্ধ গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় আর প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে ঐক্যের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে। গুলশানের হামলার পর সন্ত্রাস-উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারি দলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি ‘জাতীয় ঐক্য’র ডাক দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রেসক্লাব কিংবা অন্যান্য স্থানে আলোচনা সভাগুলোতে জাতীয় ঐক্যের নানামুখী ফর্মুলা বাতলাচ্ছেন দলীয় নেতা এবং সমমনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবীরা।
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছানো হয়েছে খালেদার জাতীয় ঐক্যের পয়গাম। বাদ যায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।কিন্তু খালেদা জিয়ার আন্তরিকতা সত্ত্বেও তার এ ঐক্যের প্রক্রিয়া কতদূর সফল হবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
বিশ্লেষকদের মতে খালেদা জিয়ার ঐক্যের প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় বাধা সরকার নয়, বরং তার নিজের দলই। বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। মাঠ পর্যায়ে তৃণমূল নেতৃত্বহীন, নেতারা ছন্নছাড়া।
গত ১৯ মার্চ অনেক ঘটা করে ঢাকঢোল পিটিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করে দলটি। কিন্তু তারপর কেটে গেছে দীর্ঘদিন। এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দলটি। কমিটি কবে হবে তাও জানে না কেউ।
সরকারের মামলায় ভয়ে ঝামেলা এড়াতে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে থাকা তো দূরের কথা, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন এমনকি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ও মাড়াচ্ছেন না সিনিয়র নেতারা।
দলের পদধারী নেতাদের কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ পারিবারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছেন। ফলে দলের বড় পদে থাকা সত্ত্বেও অনেক নেতার সঙ্গে কর্মীদের যোগাযোগ নেই।
বিক্ষিপ্ত অবস্থা বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিরও। ১৯ সদস্যের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন ড. আর এ গণি। বাকিদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হান্নান শাহ ও মির্জা আব্বাসকে মাঝে-মধ্যে দু’ একটি আলোচনা সভায় দেখা যায়। দলের প্রবীণ নেতা তরিকুল ইসলাম ও এম শামসুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানও দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন।
বাড়ি হারানোর আশঙ্কায় চিন্তিত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বিএনপির কোনো আলোচনা সভাতেই দেখা যাচ্ছে না। বার্ধক্যজনিত কারণে চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে এম কে আনোয়ারের। বেশির ভাগ সময় কাটে তার বাসায়। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, বেগম সারোয়ারী রহমান ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন সভা সমাবেশ থেকে দূরে রয়েছেন, গুলশান অফিসেও আসছেন না তারা।
দলের ৩৫ জন উপদেষ্টার মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আব্দুল কাইয়ুম ছাড়া বাকিদের দীর্ঘদিন থেকে দলের কোনো কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অনেক নেতা বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি কার্যালয়ে আসছেন না। যোগাযোগ রাখছেন না দলের নেত্রীর সঙ্গেও।
দলটির অন্যতম দায়িত্বশীল পদ হচ্ছে ভাইস চেয়ারম্যান। এ পদের সংখ্যা ১৭। পদটিতে দায়িত্বে থাকা আব্দুস সালাম পিন্টু ও অধ্যাপক আব্দুল মান্নান কারাগারে রয়েছেন। শমসের মবিন চৌধুরী পদত্যাগ করে দল ছেড়েছেন। সাদেক হোসেন খোকা বিদেশে, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন (কায়কোবাদ) অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে মাঝে-মধ্যে বিএনপির দু’ একটি প্রোগ্রামে দেখা গেলেও বাকিরা দীর্ঘদিন বিএনপি তথা বিএনপির কার্যালয় থেকে দূরে রয়েছেন।।
সব মিলিয়ে অবয়বে বিশাল হলেও এই বিএনপির কোমরে যেন জোর নেই। তাই এই ‘কোমরভাঙা’ বিএনপি নিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া কতদূর টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে তাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করছেন অনেকে।