চট্টগ্রাম : জঙ্গিবাদ নির্মূল করা প্রত্যেক মানুষের ঈমানি দায়িত্ব। ‘জঙ্গিবাদ একটি ইসলামবিরোধী কাজ। কোনোভাবেই এটিকে ইসলাম সমর্থন করে না। উল্টো এর কারণে ইসলাম হেয় হচ্ছে জানিয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ইসলামবিরোধী কাজ দূর করবো আমরা।’
সিটি মেয়র বলেন, ‘আমরা সবাই জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি বলে হয়তো জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতরা কিছুদিন চুপ থাকতে পারে। সুযোগ পেলেই তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই এরকম কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে।’
শুক্রবার সকাল ১১টায় নগরীর সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত ‘জঙ্গিবাদ রুখবেই তারুণ্য, তার মানবে না বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। জেলা প্রশাসন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, সাবেক জেলা পিপি আবুল হাশেম প্রমুখ।
সন্তানের দায়িত্ব পরিবারকে নেওয়ার অনুরোধ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, একটি ছেলে জঙ্গি কাজে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে কিনা তা পরিবারই সবার আগে জানবে। কারণ এর ফলে তার আচার-আচরণে পরিবর্তন আসবে। তাই প্রথমদিকেই সন্তানের এরকম অসঙ্গতি ধরা পড়লে পরিবারের দায়িত্ব হবে তাকে কাউন্সিলিং করা। প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে আটকানো গেলে তবে সে আর জঙ্গি হওয়ার সুযোগ পাবে না। পাশাপাশি পরিবারের যেসব সন্তান বিদেশে পড়ালেখা করতে যাচ্ছে তাদের বিষয়েও নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, এখন জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এক নম্বর কাজ হচ্ছে জঙ্গিবাদ দমন করা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনের পুরো বিষয়টি ছিল জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্পর্কিত। সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন-জঙ্গিবাদকে যেকোনোভাবে দমন করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গিবাদ নির্মূল বিষয়ে পাঁচদিনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ২৭ আগস্ট সকাল ১০টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মিলনায়তনে জঙ্গিবাদ বিরোধী অনুষ্ঠান শুরু হবে। ৩১ আগস্ট একই স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম সংলগ্ন মাঠে শেষ হবে এ কর্মসূচি।
কর্মসূচির মধ্যে থাকছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষর্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করতে উদ্দীপনামূলক এবং জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা তুলে ধরে ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ ও প্রদর্শন, সাইক্লিস্ট নিয়ে জঙ্গিবিরোধী সাইকেল র্যালি ও লিফলেট বিতরণ, স্কুল পর্যায়ে জঙ্গিবিরোধী পোস্টার লিখন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী স্লোগান লিখন প্রতিযোগিতা, গোলটেবিল ও মতবিনিময় সভা, ইমাম সম্মেলন, পথনাটক প্রদর্শনসহ নানা উদ্দীপনামূলক আয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, জামায়াত বাদে বিএনপির মধ্যেও অনেক অসাম্প্রদায়িক লোক আছে। তাদের সঙ্গে আমার বিভিন্ন প্রোগ্রামে কথা হয়। তারাও জঙ্গিবিরোধী কর্মসূচিতে থাকতে চান। কারণ মানুষ বুঝে গেছে জঙ্গিবিরোধী কাজে শুধুমাত্র সরকারের ক্ষতি না, পুরো দেশের ক্ষতি, অর্থনীতির জন্যও ক্ষতি। এজন্য আমাদের সবাইকে জঙ্গি নির্মূলে এগিয়ে আসতে হবে।
জঙ্গিবিরোধী নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরে জেলা প্রশাসক বলেন, কিছু কিছু মসজিদে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের যাতায়াত আছে। তাই আমরা প্রত্যেক মসজিদের ডাটাবেজ, ইমাম আর মসজিদ কমিটির সভাপতির ডাটাবেজ সংগ্রহ করছি। পাশাপাশি বনকর্মীদের সঙ্গেও আমরা কথা বলবো, কারণ কিছু কিছু জঙ্গি পাহাড়ে লুকিয়ে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা চৌকিদারদের সঙ্গেও বসবো। তারা জেলা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। যেকোনা প্রকারে আমরা জঙ্গিবাদ রুখবই, রুখবই।’