ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বিশা ‘জমি আছে, ঘর নাই’ প্রকল্পের নাম করে দুর্নীতি ও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছেই । অসহায় দরিদ্র মানুষের সরকারী ঘর নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এমন অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘর পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে অনেক হতদরিদ্র মানুষ বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ১০-৩০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন তার হাতে। কিন্তু কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও ঘর তৈরির কোন খরব নেই, দেয়া হচ্ছে না টাকা ফেরত। জেলাজুড়েই হতদরিদ্রদের কাছ থেকে প্রতারণা করে চেয়ারম্যান-মেম্বরদের টাকা আদায়ের মহোৎসব চলছে। কেউ সরকারী ঘর দেয়ার নাম করে আবার কেউ বিভিন্ন ভাতা কার্ড করে দেয়ার নাম করে নিচ্ছে এই টাকা। এভাবে চলছে বছরের পর বছর।
অভিযোগ রয়েছে, এসব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা সবাই সরকারী দলের। এ কারণে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নের বয়েড়া তলা গ্রামের বাসিন্দা ফাহিমা খাতুন। স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন খুপড়ি একটি ঘরে। স্বামী কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে কোনরকম সংসার চালান। ‘যার জমি আছে ঘর নাই’ তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ প্রকল্পে ঘর পাওয়ার আশায় সমিতি থেকে ঋণ করে ১৬ হাজার টাকা দেন চেয়ারম্যানের কাছে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ঘর পাননি, টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি-ধামকিসহ খারাপ আচরণ করে। প্রায় ২৫টি পরিবারের কাছ থেকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন এই চেয়ারম্যান। এছাড়াও আরো অনেক পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাতা সুবিধা দেয়ার কথা বলেও টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একই গ্রামের কাশেম আলী ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। সরকারী আধা-পাকা ঘর পাওয়ার আশায় চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বিশার কাছে গেলে টাকা দাবি করেন। পাকা ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকবেন বলে তার দাবি মেনে নিয়ে নগদ ১৫ হাজার টাকা দেন। কিন্তু কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও ঘর তো দুরে থাক, টাকাও ফেরত পাননি তিনি। একই গ্রামের উজির আলীর স্ত্রী চায়না খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ঘর পাবার আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিশা মেম্বারের কাছে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছিলাম দুই বছর আগে। আজও পর্যন্ত আমাদের ঘর দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। আমাদের মত অসংখ্য লোকের কাছ থেকে তিনি এভাবেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জিন্নাত আলী ঝিনাইদহ শহরের হাটের রাস্তায় নৈশ প্রহরীর কাজ করেন। তিনি অনেক কষ্ট করে দিনে দিনে জমানো ১০ হাজার টাকা ঘর পাওয়ার আশায় বিশা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন। অনেক দিন হয়ে গেলেও তিনি ঘর পাননি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেন। ওই গ্রামের হতদরিদ্র গোলাম নবী অভিযোগ করেন, তিনি বাড়িতে একটি নলকুপ বসানোর জন্য বিশা চেয়ারম্যামনের কাছে গেলে ২ হাজার টাকা দাবি করেন। তার দাবিকৃত ২ হাজার টাকা দেয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেছে, আজও নলকুপ পাননি, টাকাও ফেরত দেননি। অপরদিকে বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী সুমি খাতুন বলেন, তারা একটি ঘরের জন্য অনেক কষ্টে জোগাড় করে ১৬ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ঘর এবং টাকা কোনটাই পাননি তারা।
এভাবে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বিশা হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। ভূক্তভোগীরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালীচরণপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বিশা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সামজিক দলাদলির কারণে প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসানোর জন্য এসব মিথ্যাচার করছে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, সাধারণ দরিদ্র মানুষের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।