সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা বিচার চেয়েছেন হুদা কমিশনের।  আদতে কী হবে তা সবারই জানা। তবুও ৪২ নাগরিকের প্রেসিডেন্ট বরাবর লেখা চিঠি একধরনের চাপানউতোর তৈরি করেছে। বঙ্গভবন এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। সে নিয়ে খুব বেশি আলোচনাও নেই। তবে প্রশ্ন ওঠেছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি আদৌ জীবিত আছে? ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন নেতা বলেছেন, এটি এখন অস্তিত্বহীন। খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনও একইমত দিয়েছেন। স্মরণ রাখা দরকার, এ রায় ঘিরে বাংলাদেশে বহু ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল নিজ দফতরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে কী আছে? সুপ্রিম কোর্টের বিচারককে যেভাবে অপসারণ করা যাবে, নির্বাচন কমিশনারদেরও সেভাবে অপসারণ করা যাবে। এখন তো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে অন্য ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল। তিনি বলেন, হাইকোর্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দিল। আপিল বিভাগ তা বহাল রাখলেন। এর বিরুদ্ধে রিভিউ করা হয়েছে। এখন রিভিউ বিচারাধীন। ৪২ নাগরিকের আবেদনের প্রক্রিয়া আইনসিদ্ধ কি না, এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কীভাবে দিয়েছেন ওনারা জানেন, কেননা ওনারা দিয়েছেন। আইনে এখন তো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। কোর্ট খোলার পরই রিভিউ শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। (সূত্র: প্রথম আলো)
আগেই বলা হয়েছে, ষোড়শ সংশোধনী মামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত মামলা। এ মামলায় হাইকোর্ট সংশোধনীটি বাতিল ঘোষণা করে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। আপিল বিভাগের আদেশে কি আছে তা একবার দেখে আসা যাক। রায়ে আপিল বিভাগ শুধু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলই খারিজ করে দেয়নি, একইসঙ্গে  সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থাও পুনর্বহাল করে দেয়। আপিল বিভাগ পরিস্কার করে ৯৬ অনুচ্ছেদের ২,৩,৪,৫,৬ এবং ৭ ধারা পুনর্বহাল করেছেন। আইনবিদরা বলছেন, এখন শুধু একটি রিভিউ দায়ের আছে এই কথা বলে বলা যাবে না যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। কারণ, ওই রায়ের ওপর কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ নেই। অষ্টম সংশোধনী মামলার রায় কীভাবে কার্যকর হয়েছিল সেটাও স্মরণ করছেন আইনবিদরা। তারা বলেন, রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার বাইরের হাইকোর্ট বেঞ্চগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংবিধান সংশোধনের জন্য অপেক্ষা করা হয়নি। এ মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্ট রায় দেয়ার পর সরকার আপিল করে। সেসময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে। কিন্তু আপিল বিভাগ চূড়ান্তরায়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার হয়ে যায়। এ অবস্থায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অবশ্যই বহাল আছে। কারণ সরকার রিভিউ দায়ের করলেও আপিল বিভাগের কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ নেই। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগের রুলস অনুযায়ী শুধু মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে রিভিউ ফাইল করলেই দণ্ড কার্যকর স্থগিত হয়। অন্য কোন ক্ষেত্রে তা হয় না। যেহেতু ষোড়শ সংশোধনী মামলায় কোনো স্থগিতাদেশ নেই তাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল আছে।
একথা সত্য কেতাবে এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাকে মৃত বলারও সুযোগ নেই। সাংবিধানিক শূন্যতার প্রশ্নও সামনে আছে। তবে আইনবিদরা বলছেন, দ্রুতই এই রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031