ভোজ্য তেলের বাজার এবার সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। দেশে গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা যদিও বরাবরই এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। তবে মিলগেট থেকেই সিন্ডিকেট করে তেলের দাম বাড়ানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও অতিরিক্ত দামে পণ্যটি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, এমনিতেই চাল, ডালসহ প্রায় সব পণ্যের দামই চড়া। এ অবস্থায় তেলের দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের।
বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত ২২শে অক্টোবর খোলা ভোজ্যতেলের দাম ২ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মিল মালিকরা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করে এ ঘোষণা দেন তারা। সেই ঘোষণা অনুযায়ী মিলগেট থেকে খোলা সয়াবিন তেল ৯০ ও পাম তেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। তবে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১০৬-১০৭ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৯৮ টাকা। আর এক বছর আগে একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৮৫ টাকায়। এক মাসে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম বেড়েছে ১২-১৫ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১১-১৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে দেখা গেছে, গত এক মাসে প্রতি লিটারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫.৭০ শতাংশ। আর গত বছর এই সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে ২০.৭১ শতাংশ। এ ছাড়া বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৬.৯৮ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় লিটারে ৯.৫২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৫.১৭ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩২.৬১ শতাংশ।
গতকাল রাজধানীর বাজারে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৫২০ টাকা। আর এক বছর আগে এই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১০৬-১০৭ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৯৮ টাকা ও এক বছর আগে একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৮৫ টাকায়। এ ছাড়া পাম অয়েল লুজ প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৯৬ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৯৩ টাকা ও এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরেই ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কাওরান বাজারের মুদি দোকানি হায়দার আলী বলেন, গত ৩-৪ মাস ধরে কয়েক দফায় খোলা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে বোতলজাত সয়াবিনের দামও বাড়ছে। তিনি বলেন, দাম বাড়াচ্ছেন মালিকরা। যারা আমদানি কিংবা উৎপাদন করে বাজারজাত করেন তারাই মূলত তেলের দাম বাড়ান। বড় কোম্পানিগুলো যেমন বাড়ানো হচ্ছে তেমনি খোলা লুজ তেলের দামও দিনদিন বেড়েই চলছে। তিনি আরো বলেন, এখনতো সবকিছুর দামই বাড়তির দিকে। কোনকিছুর দামই কম না। কাস্টমাররা যখন দোকানে আসেন তখন জিনিসপত্রের দাম শুনেই তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। মানুষের আয়-রোজগার এমনিতেই কম। করোনার সময় মানুষ আরো অভাবে পড়েছে। এরমধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা সত্যিই হতাশাজনক।
কামাল হোসেন নামের আরেকজন দোকানি বলেন, দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার নেই। বেশি দাম দিয়ে কিনে এনে বাড়তি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের বাড়তি লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। যত বেশি দামেই বিক্রি করি আমাদের লাভ যা তাই থাকে। বরং দাম বাড়লে আমাদের জন্যও খারাপ। কারণ আমাদের তখন পুঁজি বেশি লাগে কিন্তু লাভ তো একই। কিন্তু আমদানি ও উৎপাদনকারীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ালে আমাদের তো কিছুই করার নেই।
মোহাম্মপুর টাউন হল এলাকায় বাজার করতে আসা রুকসানা পারভীন বলেন, কিছুদিন আগেও ৫ লিটার বোতল কিনেছি ৫২০ টাকায়। অথচ এখন সাড়ে ৫০০ টাকা দাম চান। চাল কিনলাম যেটা আগে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে কিনেছি। এখন সেটা ৫৮ টাকা। যদিও বাজারে সবজির দাম এখন কমেছে। অথচ কিছুদিন আগে সবজি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ডালের দামও বাড়তিই দেখলাম। এভাবে আসলে ঢাকা শহরে টেকা মুশকিল হয়ে গেছে। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পায় কিন্তু সংসারের আয় তো বাড়ে না।