জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসকদের চেম্বারে, হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে । নভেম্বর থেকেই বেড়ে গেছে সর্দি-কাশি উপসর্গের রোগীর সংখ্যা। ঘরে ঘরেই এখন এ ধরনের রোগী। করোনার উপসর্গ থাকলেও অনেকেই আসছেন সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিতে। তাদের মধ্যে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই মানুষের। তার ওপর গলা ব্যথা, শ্বাসনালির সংক্রমণ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়েও রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সামাজিক বিড়ম্বনাসহ নমুনা পরীক্ষায় জটিলতা ও আস্থাহীনতার কারণে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত অনেকেই করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মনে করছেন, করোনা হোক আর সাধারণ জ্বর হোক, তা সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, নভেম্বর থেকেই তাদের হাসপাতালে এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে করোনার উপসর্গ, সর্দি-কাশির রোগী সংখ্যা বেড়েছে। করোনার পরীক্ষা কম করাচ্ছেন রোগীরা। অর্থনৈতিক কারণে এবং সামাজিক বিড়ম্বনাসহ নমুনা পরীক্ষায় জটিলতা ও আস্থাহীনতার কারণে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত তেমন কেউ করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে তারা ভাইরাসটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং রোগ ছড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, একজন রিকশাওয়ালা চিন্তা করেন পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়লে তার সংসার চলবে কীভাবে। মাস্ক  কেনার টাকা কোথায় পাবো? এই ভয়ে অনেকেই উপসর্গ নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকেন। অনেকে সামাজিক দূরত্ব মানেন না। রেসপিরেটরি রোগের এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, আমাদের রিসোর্স কম। সাধারণ মানুষকে সেটা বুঝতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এমএ কাসেম এ ব্যাপারে বলেন, নভেম্বর থেকেই তাদের হাসপাতালে এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে করোনার উপসর্গ, সর্দি কাশি নিয়ে রোগী ভিড় বাড়ছে। করোনার পরীক্ষা কম করাচ্ছেন রোগীরা। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদের মাস্ক পরতে হবে।

এদিকে, ফার্মেসিতে সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ঘরেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসগের্র কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠছেন। কয়েকটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তারা জানান, সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি কয়েকগুণ বড়ে গেছে। যা অবস্থা, তাতে মনে হয় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ ধরনের বেশির ভাগ রোগী বা রোগীর স্বজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তাদের কাছে এসে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন।
হাজারীবাগের সিটি ফার্মেসির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, তাদের দোকান থেকে সর্দি, জ্বর, কাশির উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বহু ক্রেতা। জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে। হাজারীবাগের বাসিন্দা ফারুক আহমদে জানান, তিন দিন আগে তার জ্বর আসে।  স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে গিয়ে উপসর্গের কথা বলে প্যারাসিটামলসহ আরো কয়েকটি ওষুধ কিনে খেয়েছেন। এখন আর জ্বর নেই। তবে শরীর খুব দুর্বল। এদিকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীই মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ছেন। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকেরা। বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে ঠাণ্ডা পড়ছে। তাপমাত্রার এ তারতম্যের কারণেই সর্দি-জ্বর বেড়ে গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

সর্দি-কাশির মতো ঠাণ্ডাজনিত রোগ হলে হাসপাতাল বা প্রাইভেট চিকিৎসকের চেম্বারে না গিয়ে টেলিফোনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিচিত চিকিৎসক, জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, সংস্থা ও সংগঠনের খোলা টেলিমেডিসিন সার্ভিস, পরামর্শ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তারের এই সময়ে সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর নিয়ে হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বারে গেলে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘন হতে পারে। কারণ হাসপাতাল ও চেম্বারগুলোতে একই সময়ে অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা ভিড় করেন। সেখানে জায়গার সংকট থাকায় সবাইকে পাশাপাশি অবস্থান করতে হয়। এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয় না। ফলে ওই জায়গা থেকেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031