দেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবস্থিত । জনবলের প্রচ- অভাব। নেই তত্বাবধায়কও। অফিস ভবনটি খাঁ খাঁ করছে। একটি লোককে দেখা গেলো। তিনি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দেখভাল করে থাকেন । আরো দুজন আছেন যাদের দেখা গেলো না। খবর দিতেই দেখা গেলো একজন মোটর সাইকেলে চেপে এলেন। তার নাম তারেক। তিনি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রকল্পের প্রাণি স্বাস্থ্য দেখভাল করে থাকেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাভিল ফারাবী মূল চিকিৎসক। তার তত্বাবধানেই মূলত ব্ল্যাক বেঙ্গল দেশিয় জাতের ছাগলগুলো প্রসার লাভ করছে। মোট ৮টি শেড। মাত্র ৪টিতে ছাগল রয়েছে। বাকিগুলো খালি। তারেক জানালেন, ৪টি শেডে মোট ৪ শতাধিক ছাগল রয়েছে।
সে তুলনায় জনবল একেবারে নগণ্য। মাত্র তিনজন লোক দিয়ে চলছে হাটহাজারীতে অবস্থিত চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারি দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামারের ছাগল উন্নয়ন খামার। দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর সম্ভাবনাময় খামারটি পুনরায় ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর নতুন করে ১০০টি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দিয়ে যাত্রা শুরু করে।
প্রজননের মাধ্যমে খামার চালু হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে খামারের ছাগলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার শতাধিক। নিয়ম অনুযায়ী এ খামারে একজন অফিসার ও ১০ জন কর্মচারী থাকার কথা রয়েছে। তার বিপরীতে মাত্র তিনজন জনবল দিয়ে খামারটি পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ছাগল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, ঢাকার সাভারস্থ সরকারি ছাগল খামার থেকে একবারও বাচ্চা প্রসব না করা ৯০টি ছাগী ও প্রজননের জন্য উপযুক্ত ১০টি পাঁঠা দিয়ে ছাগল উন্নয়ন খামারটি পুনরায় চালু হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ছাগল রয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৩টি। ছাগলের খামার রয়েছে ২৭৭০টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত ৪০টি, অনিবন্ধিত ২৭৩০টি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর খামারটি ১৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সংরক্ষণ , দুস্থ গরিব মহিলা বা খামারিদের মাঝে ছাগল বিতরণ, উপজেলা ভিত্তিক বাক কিপারদের মাঝে পাঁঠা বিতরণ। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০০৯ সালের ৩০ জুন। মামলার কারণে প্রকল্প বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে পুনরায় ৯০টি ছাগী ও ১০ টি পাঁঠা নিয়ে খামারটি পুনরায় চালু হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাভার ছাগল উন্নয়ন খামার, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ থেকে ২০টি পাঁঠা ও ১২০টি ছাগীসহ মোট ১৪০টি ছাগল পায় এই খামার। গত অর্থ বছরে এ খামার থেকে ১২৯টি ছাগল বিক্রি করা হয়। যার মধ্যে ৯৯টি পাঁঠা। বাকি ৩০টি ছাগী।
বর্তমানে পাঁঠা রয়েছে ৩৭ টি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আবেদন করে মাত্র ১২০০ টাকায় পাঁঠা কেনার সুবিধা রয়েছে এখানে। একটি পাঁঠার বিপরীতে ১০টি পর্যন্ত ছাগী দেয়া যায়। তাহলে বংশ বিস্তারে অসুবিধা হয় না। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনে তেমন খরচ নাই বললেই চলে। আপনি ইচ্ছা করলে শুধু ঘাস খাইয়ে রাখা যাবে এ ছাগলগুলো। দেশি ছাগির সাথে ব্রিড বা ক্রস করে খামারে ছাগলের সংখ্যা বাড়ানো যাবে।তেমন কোন রোগ বালাইও নেই বললেই চলে। ব্ল্যাক বেঙ্গলের সাথে যমুনা পাড়ির পার্থক্য হলো এ ছাগলগুলোতে তেমন কোন খরচ নেই।
যা অন্যান্য প্রতি ছাগলে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। ডা. নাবিল ফারাবী বলেন,এ জাতের ছাগলের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেশি, দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটে, প্রথমবার একটি বাচ্চা প্রসব করলেও পরেরবার থেকে ২ বা তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। খাবার খায় কম। চামড়া খুবই ভালো। মাংস সুস্বাদু। তাই খামারিরা লাভবান হতে পারেন। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আর্থসামজিক অবস্থার পরিবর্তৃনে এ প্রকল্পটি ছড়িয়ে দিতে চান মানুষের মাঝে।