ঢাকা : বাঙালির শোকের মাস শুরু হলো। ১৯৭৫ সালের এ মাসের মধ্যভাগে ঘটে বাঙালির ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বাঙালি জাতির পুরোধা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির পিতার হত্যার পরবর্তী শাসকদের রোষানলের কারণে বেশ কয়েকটি বছর বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা নীরবে চোখের পানি ফেলে শোকের দিন কাটিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রকাশ্যে শোকদিবস পালন শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয় জাতীয়ভাবে শোক পালন। অবশ্য বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকায় কারণে ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জাতীয়ভাবে শোকদিবস পালন আবারও বন্ধ থাকে।
পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৭ সালে এ দিবসটি আবারও পালন শুরু হয়। তবে জাতীয়ভাবে পালিত হোক বা না হোক আওয়ামী লীগ বেশকিছু বছর ধরে গোটা আগস্ট মাসকে শোকের মাস ঘোষণা করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ বছরও ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সহযোগী,ভ্রাতৃপ্রতিম এবং সমমনা সংগঠনগুলোও হাতে নিয়েছে মাসব্যাপী কর্মসূচি।
শোকের মাসের প্রথম দিন মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো এতে অংশ নেয়। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে যাত্রা করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও শপথ গ্রহণ করে আওয়ামী যুবলীগ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সমমনা সংগঠনগুলো।
বরাবরের মতো এবারও ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে কৃষক লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। এদিন ‘কৃষকের কণ্ঠ’-বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভাও করবে কৃষক লীগ। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
একই দিন যুবলীগের আয়োজনে ‘বাঙালির হৃদয়ের ফ্রেমে জাতির পিতা’- শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে শিল্পকলা একাডেমিতে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘১৫ আগস্টের প্রতিবিপ্লব ও পরবর্তী বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা করবে।
এ মাসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন উদযাপন, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা এবং ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস স্মরণ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী পালন।
মূল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। ওইদিন সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও মন্দির-গির্জায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে এবং দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
ওই দিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে সরকারি কর্মসূচি পালিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই কর্মসূচিতে যোগদান করবেন। এছাড়া পরদিন ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া মাস জুড়েই সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকছে। ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শোকের মাসের কর্মসূচি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রবিবার এক বিবৃতিতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে শোকের মাসের কর্মসূচি পালনের জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।