বয়স প্রায় ৪৮। শাহজাহান গাজী। আপন মনে জাল মেরামত করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন আরো কয়েকজন। নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
শাহজাহান নামে চাঁদপুরের এ জেলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত জেলেরা মা ইলিশ শিকার করে না, বরং নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশকে সুযোগ করে দেয়। আমরা গত ২২ দিন অনেক কষ্টে সংসার চালালেও নদীতে মা ইলিশ শিকার করতে যাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে এই সময়টাতে এক শ্রেণীর অসাধু জেলে মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ এলাকা থেকে এসে চাঁদপুরের অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকার করেছে। শুধু অভয়াশ্রম এলাকায় নয়, আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক এ সম্পদ ইলিশ রক্ষায় নদীপাড়ের সকল জেলার লোকদের সচেতন হওয়া দরকার।’
গত বুধবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের মেঘনা নদীরপাড় এলাকায় খালে ইলিশ শিকার করার জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে শত শত জেলেকে।
হাফেজ গাজী, সেলিম পাটওয়ারী ও রশিদ মাঝি নামে তিন জেলে ইলিশ শিকার করবেন সাগরে। নিষেধাজ্ঞা শেষ। বুধবার মধ্য রাত থেকেই আহরণ করতে পারবেন ইলিশসহ সকল ধরণের মাছ। তাই এসব মাছ ধরার ট্রলারের জাল মেরামতসহ অন্যসব প্রস্তুতি চলছে তাদের।
এর মধ্যে হাফেজ গাজী বলেন, ‘সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনেছি। আজ রাতে অথবা বৃহস্পতিবার সকালে সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব। দক্ষিণ হাতিয়া সাগর এলাকায় গিয়ে মাছ শিকার করব। একবার গেলে কমপক্ষে একমাস থাকা হয়।’
জেলে আজাদ খান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের সরকারিভাবে যে সহায়তা দেয়া হয়। তাতে সংসার চালানোর মত তেমন কিছু হয় না। কারণ বাজারে সব কিছুরই দাম বেশি। সরকারি চাল পাই ১০ থেকে ১২ কেজি চাল। এ দিয়ে কি হয়। তবে এখন আমরা ইলিশ পাওয়ার আশায় নদীতে নামব। নদীতে মাছ থাকলে সংসার আবার স্বচ্ছল হবে।’
অন্যদিকে একই এলাকার জেলে নজরুল শেখ বলেন, ‘২২ দিন অবসর থাকলেও জাল মেরামত করারমত টাকা ছিলো না। কারণ ব্যবসায়ীরা বাকীতে কোন কিছুই বিক্রি করেন না। এখন আমরা ঋন করে টাকা নিয়ে জাল, সুতা ও নৌকার অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করেছি। সকাল থেকেই জাল মেরামত চলছে। রাতেই ইলিশ আহরণে নামা হবে।’
সাখুয়া জেলে পাড়ার এক নারী খোদেজা বেগম বলেন, ‘আমরা কিভাবে থাকি, আমাদের সংসার কিভাবে চলে আগেই সরকারকে জাননো দরকার। আমাদের বেঁচে থাকার কষ্ট বাস্তবে না দেখলে বোঝা যাবে না।’
জেলে আনোয়ার গাজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক ছবি তুইল্যা নিচে, আমাগো পরিবর্তন হয় না। ৪০ কেজির বদলে চাল পাই ১৫ কেজি। বিকল্প কর্মসংস্থানের সেলাই মেশিন পায় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের আত্মীয়রা। সরকার চাল দিয়া চেয়ারম্যান ও মেম্বারগ বড়লোক বানানোর দরকার নাই। চাল দেয়া বন্ধ করুক।’
প্রসঙ্গত, পদ্মা-মেঘনার উপকূলীয় এলাকাসহ চাঁদপুর জেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। বছরজুড়ে তারা নদীতে মাছ আহরণ করেই জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ শিকার করায় ২২ দিনে ২৩৩ জেলে আটক হলেও ১৭৩ জনের কারাদণ্ড হয়েছে।