বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করছে মাদকের পেছনে দেশে বিভিন্ন বয়সী ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত । গত ১০ বছরে মাদকাসক্তদের হাতে ২০০ জন মা-বাবা খুন হয়েছেন। এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠেছে এক জরিপ-প্রবন্ধে।

আজ রবিবার সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে ডোপ টেস্ট: এই মুহূর্তে করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেসে এসব তথ্য জানানো হয়। শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।

বেসরকারি টেলিভিশন ‘একাত্তর টিভির’ বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান ও পার্লামেন্টনিউজবিডি.কমের সম্পাদক সাকিলা পারভীন প্রবন্ধটি তৈরি করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র।

এতে জানানো হয়, পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এ হিসাবে একজন মাদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকা মাদকের জন্য ব্যয় করে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ মাদক আমদানিতে প্রতি বছর কত টাকা পাচার হচ্ছে এর সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারা দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ২৫ লাখের কম নয়। সে হিসাবে ২৫ লাখ মাদকাসক্ত বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। ফলে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

প্রবন্ধে বলা হয়, মাদকের ভয়াবহতার চিত্রটা বেশ পরিষ্কার। দু-একটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া, আজ দেশে যত অপরাধ হচ্ছে প্রতিটির গোড়া মাদকের ঘরে। গ্যাং নামের অপসংস্কৃতি তৈরির পেছনেও রয়েছে মাদক। মাদকের কারণে উচ্ছন্নে যাচ্ছে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী। ভাঙছে সংসার ও পরিবার। মাদকের টাকা জোগাড় করতে মা কিংবা বাবার গলায় ছুরি ধরছে সন্তান। ভয়াবহ সব উদাহরণ প্রকাশ হচ্ছে প্রতিদিনের খবরে।

প্রবন্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব উল্লেখ করে বলা হয়, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর তিন ভাগের দুই ভাগই তরুণ। এসব মাদকাসক্ত মাদকের পেছনে বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। গত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন। একসময় ফেনসিডিল, হেরোইনের মতো মাদকের প্রচলন বেশি ছিল, এখন তার জায়গা দখল করেছে ইয়াবা।

২৪ ধরনের মাদক চলে বাংলাদেশে

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এসব মাদক। মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ৩২টি জেলাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, টাকি, বসিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁ, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রাণাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর এলাকায় মাদক ঢুকছে।

আর ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায়।

বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরামের চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনীতে। এ ছাড়া ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেনসিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকার বান্দরবানের ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু বলেন, শুধু চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, গাড়ির ড্রাইভার ও পুলিশদের ডোপ টেস্ট নয়, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে। এটি করতে হবে একটি অধিদফতর গঠনের মাধ্যমে। যে প্রতিষ্ঠান এই ডোপ টেস্টের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা পালন করবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘দেশে মাদকের চাহিদা কমলে জোগানও কমে যাবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031