রাসেল মিয়া কিশোর বয়সে কল্যাণপুর নতুন বাজার বস্তিতে এসেছিলেন । এরপর পেরিয়ে গেছে দুই যুগেরও বেশি সময়। দীর্ঘ এই সময়ে কিশোর থেকে যুবক হয়েছেন। বিয়ে করেছেন। আছে সন্তানও। বস্তিরই একটি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পাশের আরও চারটি ঘরে তার মা, ভাই-বোনদের বসবাস। তার সামনেই গড়ে তুলেছেন আয়ের পথ। ধার-দেনা করে একটি ফার্নিচারের দোকান গড়েছেন, যা তার আয়ের একমাত্র উৎস।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার আর আয়ের পথ মাত্র দুই ঘণ্টায় পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। প্রাণ রক্ষা পেলেও আগুনের হাত থেকে রক্ষা হয়নি ঘর বা দোকানের কোনো মালামাল।
শুক্রবার রাতে কল্যাণপুর বস্তিতে যে আগুন লেগেছিল তাতেই সব হারিয়ে এখন কয়লা ও ছাই হাতে বসে আছেন রাসেল। বস্তির সামনের অংশে একটি পুরনো ফার্নিচার বেচা-কেনার দোকান ছিল রাসেলের।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে রাসেল বলেন, ‘অনেক কষ্টের সংসার ভাই। সেই ছোট আসছিলাম। অনেক কষ্ট কইরা কিছু টাকা জমাইছিলাম। একটা দোকান দিছিলাম। সব শ্যাষ!’
আগুনটি তার ঘরের পাশ থেকেই ধরেছে বলে জানান তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমার ঘরের পাশের ভাঙারির দোকানে একটা প্রেসার মেশিন আছে। হঠাৎ ওইখানে একটা আওয়াজ হইলো। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধইরা গেল। তখন যদি ঘরের মাল বের করতে যাই, তাইলে আর পোলাপান বাঁচাইতে পারি না। মালামালের দিকে আর তাকাইতে পারি নাই, পোলাপানগুলোরে কোনোভাবে বাইর করছি। তাও আমার বাচ্চার পা একটু পুড়ছে।’
রাসেল ও তার স্ত্রীর ভাষ্য, গতকাল একটি সমিতি থেকে ব্যবসার কাজের জন্য দুই লাখ টাকা লোন তুলেছিলেন তারা। টাকা ছিল ঘরের আলমারিতে। আগুনে ছাই হয়ে গেছে সেই টাকা। পুড়েছে ঘরে থাকা গহনা, দামি মালামাল।
শুধু রাসেল নয়। গত রাতের আগুনে প্রায় ৪০টি ঘর পুড়েছে এ বস্তিতে। যার মধ্যে নয়টি দোকান। এরমধ্যে পুরনো ফার্নিচারের দোকান ছিল রাসেল ও কর্নি মিজানের। আর নতুন ফার্নিচার বিক্রি করতেন ফিরোজ। লাকড়ির দোকান ছিল রাশেদ এবং কহিনূরের। আর ভাঙারির দোকান ছিল লিটন, ইউনুস, নান্নু মোড়ল, ফরিদ এবং মোস্তফার (মস্তু)। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, নান্নু মোড়লের ভাঙারির দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
আড়াই যুগ ধরে এই বস্তিতে ভাঙারির ব্যবসা করে আসছিলেন লিটন। আগুনের সময় দোকান থেকে কিছু বের করতে পারেননি তিনি। টাকায় কেনা মালামাল চোখের সামনে পুড়ে গেছে। এখন পড়ে আছে শুধু ছাই আর কয়লা।
লিটন বলেন, ‘আগুন এর আগেও এই বস্তিতে লাগছে। কিন্তু এত বড় আগুন লাগে নাই। এইবার আগুন লাগছে নান্নুর (ভাঙারির) দোকান থেকে। কিছুই বাঁচাইতে পারি নাই।’
গতকাল রাত ১০টায় লাগা আগুন নিঃস্ব করে দিয়েছে আরও ৪০টি পরিবারকে। সবকিছু হারিয়ে পথে বসা এসব মানুষের দিন কীভাবে যাবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এসব পরিবার।