চট্টগ্রাম : ফুটপাত আর রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে হকাররা। ফুটপাতের হকারদের এখনো শৃঙ্খলায় আনতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এখনো হকারদের জন্য নির্ধারণ করতে পারেনি কোন নীতিমালা।
পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচল ও দুর্ঘটনা রোধে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেই ফুটপাতের সবটুকুই হকারদের দখলে। ফলে বাধ্য হয়ে পথচারীরা নামছে রাস্তায়। এতে স্বাভাবিক যানচলাচল ব্যাহত হয়ে নিত্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
যত্রতত্র ব্যবসা করা এসব হকারকে নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ঈদের পর তাদের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় আনার কথা ছিল। কিন্তু তিন সপ্তাহ পার হলেও এখনো হকারদের নীতিমালার আওতায় আনতে পারেনি চসিক।
হকারা কে কোন এলাকায়, কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবসা করবে তা নির্ধারণ করতেই মূলত এ নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ। ঈদের পর থেকে ফুটপাতে নীতিমালার বাইরে কোন হকার ব্যবসা করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হকারদের একটি নীতিমালায় আনার জন্য বারবার হকার সমিতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঈদের আগে ও পরে বৈঠক করা হয়েছে। খুব শিগগিরই সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, হকারদের বিকেল ৫টা বা ৬টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। অর্থাৎ দিনে কোন হকার সড়ক কিংবা ফুটপাতে থাকবে না। এতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুল কলেজ এবং অফিসগামী মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। দেশের বৃহত্তম বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে বিশ্ব দরবারে নান্দনিক ক্লিন ও গ্রিন সিটি হিসেবে উপস্থাপন করে চট্টগ্রামের গুরুত্ব বৃদ্ধি করাই এ নীতিমালার মূল লক্ষ্য।
এছাড়া চসিকের পরিকল্পনা সেল থেকেও নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় হকাদের একটি নীতিমালায় আনার প্রস্তাব আসে। এতে সিদ্ধান্ত হয় হকার থাকতে পারবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ভ্যানে করে হকাররা জিনিসপত্র বিক্রি করবে। এরপর মালামাল নিয়ে তারা চলে যাবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোন অবস্থাতেই রাস্তায় বা ফুটপাতে বসতে পারবে না।
চট্টগ্রাম হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ রনি বলেন, মেয়রের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। ঈদের পরেও কথা হয়েছে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত কোন কথা হয়নি।
এদিকে গত মার্চে হকারদের শৃঙ্খলায় আনতে একটি মতবিনিময় সভা করে চসিক। রেজিস্টার্ড হকার সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে
১. প্রকৃত হকারদের একটি তালিকা প্রণয়ন।
২. গুরুত্বপূর্ণ ফুটপাতগুলোতে জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচলের পথ রেখে হকারদের বসার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমাপের ভিত্তিতে জায়গা চিহ্নিত করা।
৩. সিটি কর্পোরেশন এবং হকারদের অর্থে হকারদের দোকানের সংখ্যার ওপর আধুনিক পদ্ধতিতে ভেহিকেল তৈরি।
৪. হকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও ভেহিকেল প্রাপ্তির পর পুলিশ প্রশাসন, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে হকারদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন। এবং
৫. হকারদের দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন করা।
হকারদের নীতিমালার জন্য গঠিত কমিটির সদস্য কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, শুধু আলোচনা হয়েছে। আর কিছুই হয়নি।
তবে সূত্র জানিয়েছে, হকারদের নীতিমালায় আনতে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সবাইকে একই ধরনের ভ্যান দেওয়ার জন্য চসিকের পক্ষ থেকে ডিজাইন ঠিক করা হচ্ছে। এই ভ্যানের নাম্বার দেওয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক হকার পাবেন আইডি কার্ড ও নির্দিষ্ট জায়গা। সেখানেই ভ্যানে করে মালামাল নিয়ে তাকে ব্যবসা করতে হবে। লাল রংয়ের মার্কিংয়ের মাধ্যমে জায়গা চিহ্নিত করা হবে। চিহ্নিত জায়গার বাইরে কোন হকার ব্যবসা করতে পারবে না।
নগরীর নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, বহদ্দারহাট, ২নং গেইট, মুরাদপুর, চকবাজার, কাজির দেউরি, দেওয়ান হাট মোড়, আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, নাসিরাবাদ, কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, লালদীঘির দু’পাড়, জুবিলী রোড আমতলা, তিনপুলের মাথা, বন্দর ফকিরহাট, পতেঙ্গা ইপিজেড়, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন মোড়সহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ফুটপাতে হকারদের অবৈধ স্থাপনা আছে ফুটপাত-রাস্তা দখল করে।
হকার সমিতির মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে আঠারো থেকে বিশ হাজার হকার আছে। এদের দেখাশোনা করে তিনটি সংগঠন। এগুলো হলো, চট্টগ্রাম হকার্স লীগ, চট্টগ্রাম নগর হকার সমিতি ও চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতি। এ তিনটি সংগঠন মিলে চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশন গড়ে উঠে। এসব হকারের ১০ হাজারের অধিক দোকান রয়েছে।