আব্দুল কুদ্দুস রানা **
রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃংখলা বাহির সাথে গোলাগুলিতে ৯জন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর-ঘরে বাইরে তোলপাড় তোলে। জঙ্গি হিসাবে কল্যাণপুরে যারা নিহত হয়েছে-তাদের সবাই নাকি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। যারা আপনার আমার সন্তানের বয়সি। বাবা-মা মানুষ করার জন্য তাদের পাঠিয়েছিলেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই প্রিয় সন্তানেরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়েছে জঙ্গিবাদে। কিন্তু কেন ? এই জঙ্গি সন্তানদের বাবা-মায়েরা জাতির সামনে কি জবাব দেবেন ? চেহারা দেখাবেন কি করে ?
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু কতিপয় জঙ্গিগোষ্টি ইসলামের নামে শিক্ষিত তরুণ ও যুব সমাজকে ব্যবহার করছে।বিশেষ করে যেসব তরুণ যুবক হতাশাগ্রস্ত, বেকার, পারিবারিক বন্ধন থেকে বঞ্চিত, ধর্মের সঠিক জ্ঞান যাদের নেই, কিন্তু ধর্মের প্রতি রয়েছে প্রবল আকর্ষণ-এসব তরুণ যুবকদের পবিত্র-কোরআন-হাদিসের কিছু বিক্ষিপ্ত আয়াত বা বাণী শুনিয়ে জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গিবাদে নামিয়ে দিচ্ছে।উদ্দেশ্য-দেশকে অস্থিতিশীল করা। দেশের মানুষকে অশান্তিতে রাখা।এতে জঙ্গিদের নিশ্চয় লাভ আছে।যদিও ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃংখলা সম্পর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলামি চিন্তাবীদদের মতে, ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ ইসলামের প্রতি অনুরাগী হচ্ছেন।এর গতি রুদ্ধ করতে ইসলাম বিদ্ধেষীরা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।তারা ইসলামকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী ধর্ম হিসাবে পরিচিতি করতে ব্যস্ত।এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতিপয় ইসলামধারীদের দিয়ে গড়ে তোলে আইএস, আনসারুল্লাহ, জেএমবি, লস্কর ই তৈয়বা, হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংগঠন। তাদের উদ্দেশ্য-রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা। সঙ্গে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া। আর এই কাজে ব্যবহার করছে আমাদের প্রিয় সন্তানদের।
রাজধানীর কল্যাণপুরের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে-তারা নাকি জেএমবি সদস্য। কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামের বাড়িতে বসে জঙ্গিরা গুলশানের মতো বড় হামলার পরিকল্পনা করছিল।
পুলিশের ভাষ্য, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পুলিশ জাহাজ বিল্ডিং নামের ওই ছয়তলা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তিনতলা পর্যন্ত ওঠার পর ওপর থেকে দুজন জঙ্গি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বিস্ফোরকদ্রব্য ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান নামের একজঙ্গি গুলিবিদ্ধ হয়। রিগ্যানের বাড়ি বগুড়া শহরের সরকারি আজিজুল হক কলেজসংলগ্ন জামিল নগরে। রিগ্যান এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। তার মা রোকেয়া আক্তার নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স।
মায়ের ভাষ্য, ছেলে রিগ্যান ২০১৩ সালে করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে ২০১৫ সালে। এরপর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য বগুড়া শহরে রেটিনা কোচিং সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে ছেলে নিখোঁজ হয়।
পুলিশের ভাষ্য, কল্যাণপুরে নিহত ‘জঙ্গিদের’ বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। হামলাকারীদের বয়স, পোশাক, চেহারা, অবয়ব, চালচলন, কথা বলার ধরন দেখে মনে হয়েছে তারা উচ্চবিত্ত শ্রেণির। তারা গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গি গ্রুপের সদস্য। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হল-ঘটনাস্থলে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। সেখানেতো আমাদের কক্সবাজারের অনেক সন্তানেরা পড়াশোনা করছে।তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছেনা তো ?
তাছাড়া নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে-১৩টি তাজা গ্রেনেড, পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, ১৯টি ডেটোনেটর, চারটি ৭.৬২ পিস্তল, সাতটি ম্যাগাজিন, ২২টি গুলি, একটি তলোয়ার, তিনটি কমান্ডো চাকু, ১২টি গেরিলা চাকু, ‘আল্লাহু আকবর’ লেখা দুটি কালো পতাকা। নিহত ‘জঙ্গিদের’ পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি ও জিনসের প্যান্ট। একজন ছাড়া সব জঙ্গির পায়ে ছিল কেডস। ২০ জুন জঙ্গিরা কল্যাণপুরের বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। সোমবার রাতে তারা নাশকতার উদ্দেশে বাসাটিতে জড়ো হয়েছিল।কী সাংঘাতিক ব্যাপার !
‘জঙ্গিরা ছেলেদের বেশি টার্গেট করে। বিশেষ কিছু মসজিদে ছেলেদের জিহাদের কথা বলে উদ্ধুদ্ধ করে। তারপর হিজরতের নামে ছেলেদের ঘর থেকে বের করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়। তারপর বেহেস্তের কথা বলে ছেলেদের জঙ্গিবাদে নামিয়ে দেয়। এব্যাপারে বাবা-মাদের বেশি সচেতন হতে হবে।’
গত ২৪ জুলাই কক্সবাজারের একটি জঙ্গিবিরোধী সুধীসমাবেশে কথাগুলো বলেছিলেন-পুলিশের প্রধান (আইজিপি) শহীদুল হক।
তিনি বলেছিলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। রোহিঙ্গাদেরও সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখতে হবে। কারণ তাদেরও জঙ্গি সংগঠন আছে।গুলশানের হামলায় জঙ্গি হিসাবে যারা নিহত হল-তাদের ইসলাম সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলনা। তাদের লাশ পড়ে আছে, এখন পর্যন্ত কেউ নিতেও আসছেনা। কারণ জঙ্গিদের মানুষ ঘৃণা করে।
গুলমানের হামলায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ নিহত হয়েছেন ২২ জন। এরমধ্যে পুলিশের দুইজন কর্মকর্তাও আছেন । বিদেশিরা এসেছিলেন দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অংশ নিতে। অথচ তাঁরা ফিরলেন লাশ হয়ে। শোকালিয়ার জঙ্গি হামলায় দুইজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। জঙ্গিরা ঈদের ময়দানে পৌঁছতে পারলে শতশত মুসল্লি মারা যেত। দুই জন পুলিশ প্রাণ দিয়ে সেদিন শতশত মুসল্লির প্রাণ রক্ষা করেন।দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্র্সাবাদকে সন্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কক্সবাজারে জঙ্গি নাই-এমন দাবি পুলিশসহ একাধিক আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলবে ?
কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড় জঙ্গলে বসতি করছে মিয়ানমারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক।অতিতে উখিয়ার পাহাড় থেকে ৪৬ জঙ্গিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের নজির আছে।রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে আছে আফগান ফেরত জঙ্গি। গহিণ অরণ্যে তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আছে। টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে হামলা চালিয়ে আনসার কমান্ডারকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারাই। রোহিঙ্গারাই আনসারের ১১টি অস্ত্র লুট করে। যদিও অস্ত্র গুলো এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামু বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা করলো কারা ? পরেরদিন উখিয়া টেকনাফের আরও অনেক মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারের হামলা হল কেন ? ভবিষ্যতে হোটেলে মোটেলে, ব্যবসা কেন্দ্র-অফিস আদালতে হামলা হবেনা-এর নিশ্চয়তা কে দেবে ? এখন নিজের নিরাপত্তা নিজেকে নিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরীর মতে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, সন্তানদের গতিবিধি নজরে রাখতে হবে বাবা-মাদেরই ।নইলে আদরের সন্তানদের অকালে হারাতে হবে।সন্তানেরা জঙ্গি হয়ে মরলে-লাশ আনতে কষ্ট হবে। জাতির সামনে লজ্জায় মাথা নোয়াতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদেরকে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে বিপথগামী করছে জঙ্গিগোষ্টি।ধর্মান্ধতা বা ধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে না জানা এবং না বোঝার কারণেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্টান ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অমনোযোগীতা কিংবা তাদের কাজকর্মের খোঁজ খবর না রাখাও এ জন্য দায়ি। জঙ্গিবাদের পারিবারিক সম্পর্ক অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক থেকে সন্তানেরা পথ-নির্দেশনা পায় এবং তাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে।পরিবারে নৈতিক শিক্ষার প্রচলন নাই, সামাজ্যিক মুল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন নয়, নৈতিকতা শিক্ষা এবং সামাজিক মুল্যবোধের শিক্ষার অভাব, সুষ্টু সংস্কৃতি চর্চা না থাকাসহ ধর্মান্ধতার কারণে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে বিপদগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী- বাবা মা শিক্ষক অভিভাবকেরা তাদের প্রিয় সন্তান ও অধীনস্থদের সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করলে বিপথগামীতা কমে যাবে। কোনো বাবা-মা চান না, তাঁর আদরের সন্তান আত্বঘাতি কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হয়ে উঠুক।
আসুন-আমরা সন্তানদের প্রতি যতœবান হই।জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজে সচেতন হই, অন্যদের সচেতন করি।
লেখকঃ প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার, সহ-সভাপতি কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়ন – See more at: http://www.teknafnews.com/%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%87/#sthash.N8cDtHSM.dpuf
রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃংখলা বাহির সাথে গোলাগুলিতে ৯জন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর-ঘরে বাইরে তোলপাড় তোলে। জঙ্গি হিসাবে কল্যাণপুরে যারা নিহত হয়েছে-তাদের সবাই নাকি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। যারা আপনার আমার সন্তানের বয়সি। বাবা-মা মানুষ করার জন্য তাদের পাঠিয়েছিলেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই প্রিয় সন্তানেরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়েছে জঙ্গিবাদে। কিন্তু কেন ? এই জঙ্গি সন্তানদের বাবা-মায়েরা জাতির সামনে কি জবাব দেবেন ? চেহারা দেখাবেন কি করে ?
ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু কতিপয় জঙ্গিগোষ্টি ইসলামের নামে শিক্ষিত তরুণ ও যুব সমাজকে ব্যবহার করছে।বিশেষ করে যেসব তরুণ যুবক হতাশাগ্রস্ত, বেকার, পারিবারিক বন্ধন থেকে বঞ্চিত, ধর্মের সঠিক জ্ঞান যাদের নেই, কিন্তু ধর্মের প্রতি রয়েছে প্রবল আকর্ষণ-এসব তরুণ যুবকদের পবিত্র-কোরআন-হাদিসের কিছু বিক্ষিপ্ত আয়াত বা বাণী শুনিয়ে জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গিবাদে নামিয়ে দিচ্ছে।উদ্দেশ্য-দেশকে অস্থিতিশীল করা। দেশের মানুষকে অশান্তিতে রাখা।এতে জঙ্গিদের নিশ্চয় লাভ আছে।যদিও ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃংখলা সম্পর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলামি চিন্তাবীদদের মতে, ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ ইসলামের প্রতি অনুরাগী হচ্ছেন।এর গতি রুদ্ধ করতে ইসলাম বিদ্ধেষীরা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।তারা ইসলামকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী ধর্ম হিসাবে পরিচিতি করতে ব্যস্ত।এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতিপয় ইসলামধারীদের দিয়ে গড়ে তোলে আইএস, আনসারুল্লাহ, জেএমবি, লস্কর ই তৈয়বা, হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংগঠন। তাদের উদ্দেশ্য-রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা। সঙ্গে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া। আর এই কাজে ব্যবহার করছে আমাদের প্রিয় সন্তানদের।
রাজধানীর কল্যাণপুরের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে-তারা নাকি জেএমবি সদস্য। কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামের বাড়িতে বসে জঙ্গিরা গুলশানের মতো বড় হামলার পরিকল্পনা করছিল।
পুলিশের ভাষ্য, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পুলিশ জাহাজ বিল্ডিং নামের ওই ছয়তলা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তিনতলা পর্যন্ত ওঠার পর ওপর থেকে দুজন জঙ্গি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বিস্ফোরকদ্রব্য ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান নামের একজঙ্গি গুলিবিদ্ধ হয়। রিগ্যানের বাড়ি বগুড়া শহরের সরকারি আজিজুল হক কলেজসংলগ্ন জামিল নগরে। রিগ্যান এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। তার মা রোকেয়া আক্তার নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স।
মায়ের ভাষ্য, ছেলে রিগ্যান ২০১৩ সালে করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে ২০১৫ সালে। এরপর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য বগুড়া শহরে রেটিনা কোচিং সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে ছেলে নিখোঁজ হয়।
পুলিশের ভাষ্য, কল্যাণপুরে নিহত ‘জঙ্গিদের’ বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। হামলাকারীদের বয়স, পোশাক, চেহারা, অবয়ব, চালচলন, কথা বলার ধরন দেখে মনে হয়েছে তারা উচ্চবিত্ত শ্রেণির। তারা গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গি গ্রুপের সদস্য। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হল-ঘটনাস্থলে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। সেখানেতো আমাদের কক্সবাজারের অনেক সন্তানেরা পড়াশোনা করছে।তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছেনা তো ?
তাছাড়া নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে-১৩টি তাজা গ্রেনেড, পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, ১৯টি ডেটোনেটর, চারটি ৭.৬২ পিস্তল, সাতটি ম্যাগাজিন, ২২টি গুলি, একটি তলোয়ার, তিনটি কমান্ডো চাকু, ১২টি গেরিলা চাকু, ‘আল্লাহু আকবর’ লেখা দুটি কালো পতাকা। নিহত ‘জঙ্গিদের’ পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি ও জিনসের প্যান্ট। একজন ছাড়া সব জঙ্গির পায়ে ছিল কেডস। ২০ জুন জঙ্গিরা কল্যাণপুরের বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। সোমবার রাতে তারা নাশকতার উদ্দেশে বাসাটিতে জড়ো হয়েছিল।কী সাংঘাতিক ব্যাপার !
‘জঙ্গিরা ছেলেদের বেশি টার্গেট করে। বিশেষ কিছু মসজিদে ছেলেদের জিহাদের কথা বলে উদ্ধুদ্ধ করে। তারপর হিজরতের নামে ছেলেদের ঘর থেকে বের করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়। তারপর বেহেস্তের কথা বলে ছেলেদের জঙ্গিবাদে নামিয়ে দেয়। এব্যাপারে বাবা-মাদের বেশি সচেতন হতে হবে।’
গত ২৪ জুলাই কক্সবাজারের একটি জঙ্গিবিরোধী সুধীসমাবেশে কথাগুলো বলেছিলেন-পুলিশের প্রধান (আইজিপি) শহীদুল হক।
তিনি বলেছিলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। রোহিঙ্গাদেরও সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখতে হবে। কারণ তাদেরও জঙ্গি সংগঠন আছে।গুলশানের হামলায় জঙ্গি হিসাবে যারা নিহত হল-তাদের ইসলাম সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলনা। তাদের লাশ পড়ে আছে, এখন পর্যন্ত কেউ নিতেও আসছেনা। কারণ জঙ্গিদের মানুষ ঘৃণা করে।
গুলমানের হামলায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ নিহত হয়েছেন ২২ জন। এরমধ্যে পুলিশের দুইজন কর্মকর্তাও আছেন । বিদেশিরা এসেছিলেন দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অংশ নিতে। অথচ তাঁরা ফিরলেন লাশ হয়ে। শোকালিয়ার জঙ্গি হামলায় দুইজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। জঙ্গিরা ঈদের ময়দানে পৌঁছতে পারলে শতশত মুসল্লি মারা যেত। দুই জন পুলিশ প্রাণ দিয়ে সেদিন শতশত মুসল্লির প্রাণ রক্ষা করেন।দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্র্সাবাদকে সন্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কক্সবাজারে জঙ্গি নাই-এমন দাবি পুলিশসহ একাধিক আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলবে ?
কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড় জঙ্গলে বসতি করছে মিয়ানমারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক।অতিতে উখিয়ার পাহাড় থেকে ৪৬ জঙ্গিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের নজির আছে।রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে আছে আফগান ফেরত জঙ্গি। গহিণ অরণ্যে তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আছে। টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে হামলা চালিয়ে আনসার কমান্ডারকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারাই। রোহিঙ্গারাই আনসারের ১১টি অস্ত্র লুট করে। যদিও অস্ত্র গুলো এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামু বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা করলো কারা ? পরেরদিন উখিয়া টেকনাফের আরও অনেক মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারের হামলা হল কেন ? ভবিষ্যতে হোটেলে মোটেলে, ব্যবসা কেন্দ্র-অফিস আদালতে হামলা হবেনা-এর নিশ্চয়তা কে দেবে ? এখন নিজের নিরাপত্তা নিজেকে নিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরীর মতে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, সন্তানদের গতিবিধি নজরে রাখতে হবে বাবা-মাদেরই ।নইলে আদরের সন্তানদের অকালে হারাতে হবে।সন্তানেরা জঙ্গি হয়ে মরলে-লাশ আনতে কষ্ট হবে। জাতির সামনে লজ্জায় মাথা নোয়াতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদেরকে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে বিপথগামী করছে জঙ্গিগোষ্টি।ধর্মান্ধতা বা ধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে না জানা এবং না বোঝার কারণেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্টান ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অমনোযোগীতা কিংবা তাদের কাজকর্মের খোঁজ খবর না রাখাও এ জন্য দায়ি। জঙ্গিবাদের পারিবারিক সম্পর্ক অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক থেকে সন্তানেরা পথ-নির্দেশনা পায় এবং তাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে।পরিবারে নৈতিক শিক্ষার প্রচলন নাই, সামাজ্যিক মুল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন নয়, নৈতিকতা শিক্ষা এবং সামাজিক মুল্যবোধের শিক্ষার অভাব, সুষ্টু সংস্কৃতি চর্চা না থাকাসহ ধর্মান্ধতার কারণে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে বিপদগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী- বাবা মা শিক্ষক অভিভাবকেরা তাদের প্রিয় সন্তান ও অধীনস্থদের সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করলে বিপথগামীতা কমে যাবে। কোনো বাবা-মা চান না, তাঁর আদরের সন্তান আত্বঘাতি কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হয়ে উঠুক।
আসুন-আমরা সন্তানদের প্রতি যতœবান হই।জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজে সচেতন হই, অন্যদের সচেতন করি।
লেখকঃ প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার, সহ-সভাপতি কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়ন – See more at: http://www.teknafnews.com/%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%87/#sthash.N8cDtHSM.dpuf