দেশের শ্রমবাজার মহামারি করোনার হানায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাড়ে সাত লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য থাকলেও আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মাত্র এক লাখ ৮১ হাজার ২৭৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কম।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়রুল ইসলাম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে প্রায় এক লাখ ৮১ হাজার ২৭৩ বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন, আগের বছরে একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল চার লাখ ছয় হাজার ৯৬২ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ ১৫৯ জন বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে গিয়েছিলেন এবং ২০২০ সালে সরকার প্রায় সাড়ে সাত লাখ শ্রমিক রপ্তানি করার লক্ষ্য নিয়েছিল।’

বৈঠকে উত্থাপন করা উপাত্ত অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০২০ সালে মোট এক লাখ ৪১ হাজার ৪৬ জন শ্রমিক দেশে ফিরেছেন এবং তাদের মধ্যে ৮৮ হাজার ৫৮৬ জন বহিরাগত বা ভ্রমণ ভিসা নিয়ে এসেছিলেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ মহামারিকালীন সময়ে জনশক্তি রপ্তানি এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিদেশে থাকায় এবং বেশিরভাগ প্রবাসী নিয়মিত দেশে ভ্রমণ করায় ফেরত আসাদের সংখ্যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক নয়। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কোভিড -১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও গত অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১৮.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৯.৬ শতাংশ বেশি।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আটকে থাকা সৌদি প্রবাসীদের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদকে জানিয়েছেন যে, তিনি রবিবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন এবং বিপুলসংখ্যক সৌদি বিমান ও বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট চালনার অনুমতি দেওয়ার এবং ভিসার মেয়াদ ২৪ দিন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।’

সচিব বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ কয়েকবার বাড়ানো হলেও সৌদি কর্তৃপক্ষ আরও সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’

আটকেপড়া প্রবাসীদের প্রতিবেদন দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে এসে আটকাপড়া প্রবাসীদের বিদেশে চাকরিতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে প্রতিবেদন দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বৈঠকের শেষে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে কর্মসংস্থান নিয়ে অতিরিক্ত (অনির্ধারিত) আলোচনায় গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে কীভাবে আটকা পড়া প্রবাসী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো যায়, যথাযথভাবে পুনরায় নিয়োগ দেয়া যায় এবং বিদেশে নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণ করা যায় সে বিষয়ে একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।’

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য উজবেকিস্তান এবং কাজাখস্তানের মতো কিছু সম্ভাব্য চাকরির বাজার রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোরুল ইসলাম।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আইনের নীতিগত অনুমোদন

দেশের বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজগুলোকে একটি আইনগত কাঠামোর আওতায় পরিচালনার উদ্দেশ্যে ‘বেসরকারি মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে আজকের মন্ত্রিসভা।

বিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো এতদিন দু’টি নীতিমালার অধীনে চলতো। নীতিমালা দিয়ে সব কিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছিল না, এ জন্য নতুন আইন করা হচ্ছে।’

দেশে বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৭০টি, ডেন্টাল কলেজ ২৬টি। ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং একটি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সচিব বলেন, যে বিভাগে যে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ থাকবে, সেই বিভাগের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেগুলো পরিচালিত হবে। ঢাকা বিভাগের সব বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন এলাকায় মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপনে দুই একর ও অন্যান্য এলাকায় চার একর জমি থাকতে হবে।

সচিব বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক অনুমোদন, একাডেমিক অনুমোদন নবায়ন, শিক্ষা কার্যক্রম, কতজন ছাত্র থাকবে, সে জন্য কি কি ফ্যাসিলিটিজ থাকতে হবে, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত কি হবে, শিক্ষকদের কি যোগ্যতা থাকবে, কলেজগুলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, কি ফ্যাসিলিটিজ থাকবে- এ বিষয়গুলো খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

‘প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপাত হবে ১:১০, অর্থাৎ প্রত্যেক ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সর্বনিম্ন ছাত্র হতে হবে ৫০ জন। ৫০ জনের কম হলে (মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ) করা যাবে না। ২৫ ভাগের বেশি খন্ডকালীন শিক্ষক রাখা যাবে না, ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক থাকতে হবে’, বলেন তিনি।

বর্তমান নীতিমালায় অনেক কিছু স্পষ্ট না থাকায় অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক থাকতে হবে, সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকবে।’

পরিচালনার বিস্তারিত নির্দেশনার জন্য খসড়া আইনে বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031