চট্টগ্রাম : চার পদে আট নিয়োগে ৮০ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছেপঞ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে। এ ছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে রেলওয়ের নিয়োগবিধিও অনুসরণ করা হয়নি। রেলওয়ের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ক্লিনার পদে একজন, ডাক রানার পদে দুই জন, বাবুর্চি পদে চারজন এবং ওয়েটিং রুম আয়া পদে একজনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগের পুরো দায়িত্ব ছিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের। সম্প্রতি এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
এর আগে গত ২ জুন চট্টগ্রাম ও ৫ জুন রাজশাহীর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে চার পদে আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রেলওয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী, কোনো পদে একটি মাত্র নিয়োগ হলে সেটি অবশ্যই ঢাকা বিভাগের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে। আবার বিভাগের যে জেলায় জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সে জেলা থেকেই নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু এই বিধি অনুসরণ করা হয়নি এসব নিয়োগে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্স ক্লিনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজনকে। নিয়ম অনুযায়ী এই পদে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজশাহীর আবদুস সোবহানকে (রোল নম্বর- রাজশাহী-৮)।
ওয়েটিং রুম আয়া পদেও একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ পদেও ঢাকা বিভাগের বাসিন্দার বদলে নিয়োগ পেয়েছেন লালমনিরহাটের শামিমা নাসরিন (রোল নম্বর- লালমনিরহাট-১)। অভিযোগ উঠেছে, এদের দুজনের কাছ থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে যেসব পদে দুজন নিয়োগ হওয়ার কথা, সেগুলোর একটি ঢাকা ও একটি রাজশাহীর বাসিন্দা নিয়োগ হওয়ার কথা। এখানে রাজশাহী বিভাগ থেকে একজন নিয়োগ পেলেও ঢাকা বিভাগ থেকে কাউকে নেওয়া হয়নি। জানা গেছে, অন্তত ১০ লাখ টাকা করে উৎকোচের বিনিময়ে কুমিল্লার হানিফ মিয়া ও নওগাঁর আবু রায়হান নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের রোল নম্বর যাথাক্রমে কুমিল্লা-১৭ ও নওগাঁ-১১।
অন্যদিকে রেলওয়ের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, কোনো পদে চারজন নিয়োগ হলেও একই বিভাগ থেকে দুজন নিয়োগ দেওয়া যাবে না। অথচ এখানে বাবুর্চি পদে রাজশাহী জেলা থেকেই দুজন নিয়োগ পেয়েছেন। তারা হলেন, আলমগীর ফারুক ও মোজাহার আলী। তাদের রোল নম্বর যথাক্রমে, রাজশাহী-৮ ও রাজশাহী-১৫।
সূত্র জানায়, এ পদে আরও দুজন নিয়োগ পেয়েছেন। তারা হলেন, চট্টগ্রামের আবিদ ইসলাম ও নরসিংদীর এ কে এম বদিউজ্জামান। তাদের রোল নম্বর যথাক্রমে চট্টগ্রাম-২ ও নরসিংদী-৩। বাবুর্চি পদে নিয়োগ পাওয়া এই চারজনই অন্তত ৮-১০ লাখ টাকা করে দিয়ে ‘সোনার হরিণ’ ধরেছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার নিলেন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। এসব বিষয়ে তিনি নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের জৈষ্ঠ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (সিপিও) কামাল শেখ বলেন, দু-একটি পদের জন্য বিভাগের কোটা অনুসরণ করা হয়নি। তবে এই একটি কোটা বাদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটার মতো সব কোটাই অনুসরণ করা হয়েছে। আর নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খায়রুল আলমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।