চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ মরফলা গ্রামের গুরা মিয়ার ছেলে ছাবের আহমদ। বিদেশে থাকেন। সম্প্রতি দেশে এসেছেন প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে। ছুটি কাটিয়ে আবারও গত ২৫ জুলাই তার প্রবাস কর্মস্থল দুবাই চলে যাওয়ার দিনক্ষণ ছিল। কিন্তু অজানা এক কালবৈশাখী ঝড়ে সব এলামেলো করে দেয়। ১৯ জুলাই সাতকানিয়া থানা পুলিশ তাকে নিজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। কারণ জানতে চাইলে পুলিশ জানায় সন্দেহজনক আটক করা হয়েছে। আদালতে গেলে জামিন দিয়ে দেবে।
কিন্তু স্বজনেরা আদালতে গেলে জানতে পারে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কথিত সালমা আক্তার পপির দায়ের করা কোতোয়ালী থানার একটি ধর্ষণ মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ছাবের আহমদ বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নগরীর লালদীঘির পাড়ের হোটেল তুনাজ্জিন। রুম নম্বর ১১৩। ৩ জুলাই রাত ৯টা। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে ভিকটিমকে রুমে ডেকে তুলে নেয় সাতকানিয়ার বাসিন্দা প্রবাসী ছাবের আহমদ (৪০)। এরপর সারারাতে তিনবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েন ভিকটিম। পরদিন ৪ জুলাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ধর্ষিতা দেখেন ‘ধর্ষক’ ছাবের রুমে নেই। এরপর হোটেল থেকে বেরিয়ে ঘটনা আত্মীয়স্বজনকে জানান তিনি।
ওই দিন দুপুর আড়াইটায় তুনাজ্জিন হোটেলের ৫০০ গজ দূরে অবস্থিত কোতোয়ালী থানায় গিয়ে প্রবাসী ছাবেরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এজাহার দায়ের করেন ওই মেয়ে।
কম্পিউটার টাইপ করা কথিত ধর্ষিতার ওই এজাহারে হাতে লেখা তারিখ ও স্বাক্ষর রয়েছে। কোনো সাক্ষীর নাম নেই। নেই ভিকটিমের কোনো মোবাইল নম্বরও। এমনকি ওই হোটেলের ম্যানেজার, ওয়েটার কিংবা পার্শ্ববর্তী রুমের কেউ ঘটনা জানতো এমন কোনো বর্ণনাও নেই।
গুরুতর এই অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা এজাহার ‘গুরুত্ব’ দিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন কোতোয়ালী থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন। তদন্তের দায়িত্ব দেন থানার উপ-পরিদর্শক বিকাশ কান্তি শীলকে।
তদন্ত কর্মকর্তা পরদিন ধর্ষিতাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যায় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। কিন্তু চমেকের ফরেনসিক বিভাগের সব ডাক্তার ঈদের ছুটিতে থাকায় ভিকটিমকে আদালতের মাধ্যমে ডবলমুরিং থানাধীন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। কিন্তু চমেকের ফরেনসিক বিভাগের সব ডাক্তার ঈদের ছুটিতে থাকার কথাটি সত্য নয় বলে জানান ওই বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
এজাহারে বাদীর উল্লেখ করা স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালীর চরজব্বার থানার চরহাসেম গ্রাম ও বর্তমান ঠিকানা ইপিজেড থানার বন্দর টিলার কালাম কলোনিতে খোঁজ মেলেনি ওই মেয়ের। এমনকি ‘কালাম কলোনি’ নামের কোনো কলোনি ওইস্থানে নেই বলে জানান স্থানীয়রা।
কথিত ধর্ষিতার দায়ের করা ওই মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে জেলহাজতে আছেন ছাবের আহমদ। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দীন অভিযোগ করেন, ‘স্থানীয় বাদশা কন্ট্রাক্টর ও ইব্রাহীম পূর্ব শত্রুতার জের ধরে থানা পুলিশকে হাতে নিয়ে কথিত একটি ঘটনা সাজিয়ে এক নারীকে ভিকটিম সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ কোনো ধরনের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই না করে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে। এখন বাদশা কন্ট্রাক্টর ও ইব্রাহীম ধর্ষণ মামলাটি আপসে তুলে নেবে বলে ছয় লাখ টাকা ও একটি অলিখিত চেক দাবি করছেন।’
এ ব্যাপারে ছাবেরের নিকটাত্মীয় সেজে বাদশা কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপসের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইব্রাহীম মামলাটি দায়ের করেছেন। তাকে ছয় লাখ টাকা ও ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ঝামেলায় না যাওয়ার জন্য সিকিউরিটি হিসেবে একটি অলিখিত চেক দিলে মামলা তুলে নেয়া হবে।’
মামলার এজাহারে দেয়া ঠিকানা মতে পুলিশ এজাহারকারী মেয়েটিকে খোঁজে পাচ্ছে না জানিয়ে মামলা ও চেক দেয়ার পর এজাহারকারী আদালতে মামলা তুলে নিতে হাজির হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে আদালতে উপস্থিত করার দায়িত্ব আমাদের। তাকে নিয়ে টানাটানি করলে আপস হবে না। আপনারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে লাভ হবে না। তখন পুলিশ ডিমান্ড করবে বেশি। শেষে ছাবের আরও বিপদে পড়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিকাশ কান্তি শীল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যে কেউ চাইলে থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতে পারে। আমি নিজেই মামলাটি তদন্ত করছি এবং বাদীর এজাহারে মোবাইল নম্বর না থাকায় উল্লিখিত ঠিকানায় নোটিশ পাঠিয়েছি থানায় হাজির হতে। অপরদিকে ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’