গত তিন দিন ধরেই শিরোনামে। আবদুল মালেক। সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান গাড়ি চালক। পত্রিকায় লিড নিউজ। টিভিগুলোও ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাকে নিয়ে খবর প্রচার করছে, ঝড় ওঠছে টকশোতে। চেহারাও হয়ে ওঠেছে পরিচিত। তার বাসার বিলাসবহুল দরজার ছবিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
বাংলাদেশে এমনিতে অনেকদিন ধরেই খবরের খরা চলছে। যদিও পরিস্থিতি এমন না হলেও আবদুল মালেকের খবরটি কম গুরুত্ব পেতো না।

তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীর কোটি কোটি টাকার বৈভবের মালিক হওয়াতো কম বিস্ময়কর নয়। যদিও মাঝে মাঝেই তার মতো কারও কারও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির খবর বের হয়। তাদের মধ্যে ‘দুর্ভাগা’ কেউ কেউ আইনের আওতায়ও আসেন।
কিন্তু বিলিয়ন ডলারের একটি প্রশ্ন বরাবরই থেকে যায় আড়ালে। মালেকেরা এই সম্পদের মালিক হন কীভাবে? তাদের হাতে তো আর আলাদীনের চেরাগ নেই। কাজ পাইয়ে দেয়া, চাকরি দেয়া কোনোটির অথরিটিইতো তারা নন? তাহলে কী সেই যাদু! এই প্রশ্নের জবাব না খোঁজার কারণেই সম্ভবত সব দুর্নীতি বিরোধী অভিযানই আখেরে ফল দেয় না। কয়দিন একটু আওয়াজ শোনা যায়। আমজনতাও সামান্য সময় মাতম করে। পরে আবার সবকিছু ভুলে যায়। মেতে ওঠেন নতুন কোনো বিষয় নিয়ে।
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা নতুন কোনো বিষয় নয়। আবজালের রূপকথার কাহিনী নিয়ে তো গণমাধ্যমে কম চর্চা হয়নি। শেষ পর্যন্ত তার স্থান হয়েছে কারাগারে। কিন্তু স্ত্রী লাপাত্তা। ‘ভদ্রমহিলা’ সম্ভবত বেগমপাড়াতেই আছেন। স্বাস্থ্যের মধু খেয়ে মোতাজজেরুল ইসলাম মিঠু পাড়ি জমিয়েছেন উন্নত দুনিয়ায়। তার চকচকে চেহারা আর গাড়ির ছবি পাওয়া গিয়েছিল কয়দিন আগেই। মিঠু পাড়ি দিলেও তার চক্র এখনো সক্রিয় এমন কথাও শোনা যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই মধুচক্রের সদস্য কি কেবল আবজাল, মালেকরাই। তাদের স্যারেরা কি ধোয়া তুলশি পাতা। তাদের কি বিচারের আওতায় আনা হবে না। নাকি কিছু মিডিয়া শোতেই খেল খতম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যথার্থই বলেছেন, দুর্নীতিবাজ যে উচ্চ পর্যায়ের বা নিম্ন পর্যায়েরই হোক না কেন কেউ এককভাবে দুর্নীতি করে না। আটক গাড়িচালক যে পর্যায়ের চাকরিচজীবী তার পক্ষে এতো সম্পদ অর্জন করা অসম্ভব। কাজেই তার সম্পদ অর্জন যে অবৈধ পন্থায় এটা অত্যন্ত পরিষ্কার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই দুর্নীতি তিনি এককভাবে করেননি। এই দুর্নীতির সঙ্গে তার সহযোগীদের বিশেষকরে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এই দুর্নীতি তিনি করতে পারতেন না যদি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ না থাকতো। কাজেই শুধু কান নিয়ে টানাটানি করলে হবে না মাথা টানতে হবে।
আমাদের অসহায়ত্বের দিকে ইংগিত করে সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা ফেসবুকে লিখেছেন, ড্রাইভার, মালি এদের কাহিনী আমরা রমরমা করে প্রচার করতে পারি। ড্রাইভার, মালিদের যারা বড়কর্তা তাদের কাহিনী সাধারণত আমরা প্রচার করতে পারি না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে এবারকার তৎপরতাও কি কেবল কান নিয়ে টানাটানির মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মাথা পর্যন্ত না গেলে এসব কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত কোন উপকারে আসবে না। আবজাল, মালেকদের জায়গায় নতুন চরিত্র আসবে। পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে না।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031