জাতীয় সবজি চালকুমড়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফল। সংস্কৃত ভাষায় একে ‘কুষ্মাণ্ড’ বলা হয়। বাজারে আমরা দু রকমের কুমড়া দেখতে পাই— লাল বা হলুদ কুমড়া। আর সাদা চালকুমড়া। দামে অপেক্ষাকৃত কম হলেও দু ধরনের কুমড়াই গুণের আধার। চালকুমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম বেনিনকাসা হিসপিডা। করোনাকালে ডাক্তাররা হলুদ রঙের ফল, হলুদ রঙের তরকারি বেশি করে খেতে বলছেন। কারণ এগুলোতেই আছে বেশি মাত্রায় স্বাস্থ্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় ভিটামিন।
চালকুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া, পায়েস এবং কুমড়া বড়া তৈরি করেও খাওয়া হয়। শুধু চালকুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়।
চালকুমড়ায় রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা ও ফাইবার, তাই চাল কুমড়ার উপকারিতা অনেক। যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চালকুমড়া।
চালকুমড়া নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। চালকুমড়ায় রয়েছে– খাদ্যশক্তি, আমিষ, শর্করা, ফাইবার, চর্বি, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, লৌহ, জিংক, ফসফরাস।
আয়ুর্বেদের মতে, চালকুমড়া পুষ্টিকারক বীর্যবর্ধক ও গরিষ্ঠ। রক্তের দোষ অর্থাৎ রক্তবিকার দূর করে, বায়ুর প্রকোপ কমিয়ে দেয়। কচি কুমড়া শীতল ও পিত্তনাশক। তবে মাঝারি মাপের কাঁচা কুমড়াকে কফকারক বলা হয়েছে। বড় পাকা কুমড়া শীতল নয়, তবে যদি একটু সোডা বা লবণ মিশিয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া যায় তাহলে ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে, হজম করা যায় তাড়াতাড়ি, মূত্রাশয় পরিষ্কার করে, মানসিক ব্যাধি সারায় এবং শরীরের আরও অনেক দোষ দূর করে। পাকা চালকুমড়ার বীজ কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধের কাজ করে।
চালকুমড়া এন্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে পেট এবং অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ইনফেকশন বা আলসার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি মসলাযুক্ত খাবার বা দীর্ঘদিনের উপবাসের কারণে পাকস্থলিতে তৈরি হওয়া এসিড দূর করতে সাহায্য করে।
পাকা লাল কুমড়ার তুলনায় চালকুমড়ার অনেক বেশি ভেষজ গুণ আছে। হার্টের পক্ষে ভালো, মনোবিকার দূর করে, তৃষ্ণা দূর করে, অরুচি নাশ করে, বাত, পিত্ত, কফ দূর করে। চালকুমড়া বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিসের এবং অশ্মরী অর্থাৎ পাথরি রোগের মহৌষধ। চালকুমড়ার বীজ থেকে যে তেল বের করা হয় সেই তেলও পিত্তনাশক, শীতল, চুলের বৃদ্ধির পক্ষে ভালো তবে গুরুপাক ও শ্লেষ্মাকারক। চালকুমড়ার লতাপাতারও শর্করা ও পাথরি নাশক গুণ আছে।
চালকুমড়ার রস একটু চিনি ও জাফরানের সঙ্গে পিষে খেলে অজীর্ণ ভালো হয়, পুষ্টি বাড়ে, ফুসফুস ভালো থাকে এবং বিভিন্ন রোগে উপকার পাওয়া যায়।
যক্ষ্মা রোগের মহৌষধ। প্রতিদিন চালকুমড়ার রস খেলে যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ কেটে যায়। চালকুমড়া রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে, যাদের কাশের সঙ্গে রক্ত বের হয় এমন ক্ষেত্রে চালকুমড়ার রস খেলে ভালো হয়ে যায়। এতে রক্ত বের হওয়া থেমে যায়। চালকুমড়ার রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ একটু চিনি মিশিয়ে খাবেন। রক্ত ওঠা বা পড়া যেটাই হোক না কেন, বন্ধ হবে। আরও ভালো হয় একটু, বাসক পাতার রস ঐ সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া।
ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে। চালকুমড়া শরীরের ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত নালীতে রক্ত চলাচল সহজতর করে। চাল কুমড়ো অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবারের বিকল্প হিসেবেও খাওয়া যায়।
শরীরের ক্ষয়-ক্ষতিতে মাথা হালকা বোধ, মনে কিছু থাকে না, এক্ষেত্রে এর শুকনো শাঁস চূর্ণ (জল নিংড়ে শুকিয়ে নিতে হয়) ২ থেকে ৩ গ্রাম একটু মধু মিশিয়ে খেতে হবে; এটাতে ঐ দোষটা চলে যায়। কুমড়া বা চাল কুমড়া খেলে পরিশ্রম করবার ক্ষমতা বেড়ে যায়, শরীর পুষ্ট হয়। কুমড়ার পাকা বীজের শাঁস পিষে নিয়ে ঘিয়ে ভেজে চিনিতে পাক করে লাড্ডু তৈরি করে প্রতিদিন নিয়মিত খেলে এনার্জি বাড়ে এবং অত্যধিক পরিশ্রম করার জন্যে যে দুর্বলতা আসে তাও দূর হয়।
হৃদযন্ত্রের বৃদ্ধি হলে কি অসুবিধে হয় সব চিকিৎসকই জানেন। এক্ষেত্রে রোগীকে পাকা চালকুমড়ার হালুয়া খাওয়ানোর অভ্যাস করলে ভালো হবে। এই সবজি বলকারক, পুষ্টিকর, ফুসফুসও ভাল রাখে।
পেটের যে কোনো জায়গায় হোক না কেনও, এই কুমড়ার শাসকে শুকিয়ে পুড়িয়ে (অন্তর্ধুম) তার চূর্ণ (আধ গ্রাম মাত্রায়) গরম পানি খেলে উপশম হবেই।
চালকুমড়ার বীজের শাস ২ গ্রাম আন্দাজ বেটে পানিসহ খেতে হয়। চাল কুমড়ার বীজ কৃমি নাশ করে।
পেট ফাপা ও প্রস্রাব ভালো যদি না হয় এ ক্ষেত্রে চালকুমড়োর রস পেটে মালিশ করলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে দুটোই সহজ হয়।[ আবার দু-চার চা চামচ চাল কুমড়ার রস বের করে নিয়ে তাতে চিনি মিশিয়ে খেলে অম্বল বা অজীর্ণ রোগ সারে।
চালকুমড়া হলো জন্ডিস রোগের সবচেয়ে সস্তা ও সুলভ ওষুধ। চালকুমড়ার টুকরো রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে খেলে বা টাটকা চাল কুমড়ার তরকারি রান্না করে খেলে জনডিস তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
মৃগী ও উন্মাদ রোগের পক্ষেও এটি উপকারী। চালকুমড়ার মোরব্বা নিয়মিত খেলে মাথা গরম হওয়া কমে, মাথা ঘোরা সেরে যায়, উন্মাদ রোগ সারে এবং খুব ভাল ঘুম হয়।
ত্বক এবং চুলের যত্নেও চালকুমড়ার রস অনেক সাহয্য করে। চালকুমড়ার রস নিয়মিত ত্বক ও চুলে মাখলে চুল চকচকে হয় এবং ত্বক সুন্দর হয়। বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও চাল কুমড়া সাহায্য করে।
এছাড়াও চালকুমড়ার বীজ গ্যাস্ট্রিক রোগের উপশম করে। কোষ্ঠকাঠিন্য পেট ফাপা এবং প্রসাব কোন কারণে অনিয়ামিত হয়ে গেলে চালকুমড়া খেলে অনেক উপকার হয়।