বিজ্ঞানীদের এই সৌরমণ্ডলে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনও গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নেই বলেই এতদিন মোটামুটি স্থির ধারণা ছিল । সৌরমণ্ডল পেরিয়ে আরও দূর মহাকাশের কোনও গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা থাকলেও তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। মঙ্গল গ্রহে প্রাণ আছে কিনা, তা নিয়ে একের পর এক গবেষণা চললেও যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে গবেষণার কাজ থেমে থাকেনি। লাল ভূপৃষ্ঠে হন্যে হয়ে প্রাণ খুঁজছে নাসার পাঠানো রোভার। কিন্তু এরই মাঝে মঙ্গলের গবেষণাকে ছাপিয়ে খবরের শিরোনামে এখন শুক্র গ্রহ। যদিও পৃথিবীর আকাশে ইউএফও বা আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টের দেখা মেলার দাবি রয়েছে ভুরি ভুরি। এবার কি সত্যি সত্যিই খোঁজ মিলতে চলেছে তাদের?
বিজ্ঞানীদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণার ফল তেমনই জল্পনা উসকে দিয়েছে।
আর তাও বহু দূর মহাকাশে নয়, এই সৌরমণ্ডলেই পৃথিবীর একেবারে নিকট প্রতিবেশী গ্রহ শুক্রেই প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। শুক্র গ্রহ কে ঘিরে থাকা মেঘের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে ফসফিন গ্যাস। যা মাইক্রবস থাকার ইঙ্গিত দেয়। পৃথিবীতে দেখা গিয়েছে, এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া কম অক্সিজেনের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। তারা ফসফিন উৎপাদন করে। শুক্র গ্রহে যেহুতু এরকম এক রাসায়নিক পদার্থের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তাই এলিয়ান থাকার ইঙ্গিত কে এড়িয়ে যেতে পারছেন না গবেষকরা। তবে এখনও জীবনের সন্ধান সেভাবে পাওয়া যায়নি। হাওয়াই থেকে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে পায় ফসফিনের অস্তিত্ব। চিলিতে অবস্থিত রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে ফের আরও একবার পরীক্ষা করা হয়। তারপরই, ফসফিনের অস্তিত্বে শিলমোহর দেন গবেষকরা। একটি ফসফরাসের সঙ্গে তিনটি হাইড্রোজেন অনু যুক্ত হলে ফসফিন তৈরি হয়। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডের একটি বেসরকারি সংস্থা, যারা ইতিমধ্যেই মহাকাশে অন্তত ১২টি রকেট পাঠিয়েছে, তারা এবার শুক্রগ্রহে ছোট একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে চাইছে। গত এক দশকে একাধিকবার শুক্রগ্রহ অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে নাসা। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনও প্রস্তাবই বাস্তবায়িত হয়নি। নাসার পক্ষ থেকে চাঁদ, মঙ্গল, বুধে অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে শুক্র অভিযানের জন্য দু’টি মহাকাশযান চূড়ান্তও করে নাসা। কিন্তু কোনও মহাকাশযানকেই শুক্রগ্রহে পাঠানো হয়নি। এবার কি শুক্র অভিযান হবে? নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেটের প্রধান টমাস জুরবাকেন জানিয়েছেন, শুক্রগ্রহে ছোটমাপের একটি মহাকাশযান পাঠানো যেতে পারে। এরই মধ্যে শুক্র গ্রহকে নিজেদের বলে দাবি করল রাশিয়া। গত সপ্তাহে রাশিয়ান মহাকাশ কর্পোরেশন রোসকোমমসের প্রধান দিমিত্রি রোগোজিন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ মিশন ছাড়াও আমরা শুক্র গ্রহে নিজস্ব মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করেছি। কারণ শুক্র গ্রহটা আমাদেরই। হেলিকপ্টার শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হেলিরাশিয়া ২০২০-তে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই মন্তব্য করেন তিনি। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা তাস এই খবর জানিয়েছে। এখন দেখার শুক্র গ্রহের ওপর কার অধিকার কায়েম হয়।