চট্টগ্রাম : দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। বিএনপি ‘নেতৃত্বশূন্য’ অবস্থায় উপনীত হওয়ার উপক্রম হলে দলের হাল ধরবেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা। এই গুঞ্জন চলছে ইদানীং। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও অনেকগুলো মামলা চলমান। এসব মামলার রায়ে তারও সাজা হওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীরা। তার সাজা হলে তিনি এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দুজনের কেউ-ই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বিএনপি হতে যাচ্ছে নেতৃত্বশূন্য। বলা হচ্ছে, হতাশার মধ্যেও নতুন আশার আলো দেখাতে শুরু করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান। শোনা যাচ্ছে তিনিই শেষ পর্যন্ত হাল ধরতে পারেন বিএনপি রাজনীতির। লন্ডন থেকে উপযুক্ত সময়ে তার দেশে ফেরার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডা. জোবায়দা রাজনীতিতে এলে তা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ। নিজেও শিক্ষিত, মার্জিত ও অত্যন্ত মেধাবী। ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ যদি একজন বিদেশিনী হয়ে ভারতের কংগ্রেসের মতো দলের কাণ্ডারি হতে পারেন তাহলে রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ডা. জোবায়দা কেন রাজনীতিতে আসতে পারবেন না? তবে ব্যাপারটি একান্তভাবেই নির্ভর করবে তার পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর।
জানা গেছে, একের পর এক ব্যর্থ আন্দোলনের পর বর্তমানে টালমাটাল অবস্থা অতিক্রম করছে বিএনপি। কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নিজেরা মাঠে না থাকার পুরনো গল্প আরও জোরালো হচ্ছে দলটির। সরকারের কঠোর নীতির শিকার দলীয় নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার, হয়রানি, হচ্ছেন। নানান অজুহাতে বড় নেতারাও একবার জামিনে বের হচ্ছেন, আবার জেলে যাচ্ছেন। বিএনপি ও তার চেয়ারপারসনের সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চিকিৎসা ও মামলার কারণে এতদিন তারেক রহমান দেশে ফিরতে না পারলেও উচ্চ আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশের ফলে তার দেশে ফেরার বিষয়টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব মামলা ও আদালতের রায়কে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেও শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তার মাথার ওপরও রয়েছে মামলার খড়গ। দুই-এক মাসের মধ্যেই কয়েকটি মামলার রায়ও ঘোষণা করা হতে পারে খালেদা জিয়ার। এদিকে ডা. জোবায়দার স্বামী তারেক রহমানকে গত ২১ জুলাই অর্থ পাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ডসহ তাকে সাত বছরের সাজা দিয়েছে উচ্চ আদালত। একমাত্র দেবর আরাফাত রহমান কোকো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দেড় বছর আগে। সরকারি ডাক্তার জোবায়দা স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে রয়েছেন, দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। শাশুড়ি খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর রায়ও আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই হতে পারে। পরিবার ও দলের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে জোবায়দাই দলের হাল ধরছেন— এমন জোর আওয়াজ উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এমনকি স্বয়ং খালেদা জিয়াও এমনটাই চাচ্ছেন বলে দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ডা. জোবায়দা নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের ছোট মেয়ে। তার বিরুদ্ধে নেই কোনো দুর্নীতির অভিযোগ। তার ‘ক্লিন ইমেজ’ দলে ইতিচাবক প্রভাব ফেলবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জোবায়দা রহমানের নিজ জেলা সিলেটে বাবার ও পরিবারের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলে যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে সিলেট বিভাগে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন জোবায়দার বাবা। সে বিবেচনায়ও সিলেটবাসীর কাছে যথেষ্ট প্রহণযোগ্যতা রয়েছে জোবায়দা রহমানের। এতদিন বিএনপি রাজনীতির প্রতি তেমন একটা আগ্রহ না থাকলেও সাম্প্রতিককালে দলের তৃণমূলের অবস্থা ও নেতৃত্ব নিয়ে ডা. জোবায়দা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।