অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন । গতকাল সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, বর্তমানে ওই ব্যাংকগুলোর এক লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গা। জবাবে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের আট হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের পাঁচ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের চার হাজার ৯০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের সাত হাজার ১৫৬ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৫৫৮ কোটি টাকা। একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো বিকল্প-বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে সফল না হলে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০১৯) সোনালী ব্যাংক পাঁচ হাজার ৩০৫ কোটি ২৯ লাখ, জনতা ব্যাংক দুই হাজার ৮৬১ কোটি ৬৩ লাখ, অগ্রণী ব্যাংক দুই হাজার ৯৫৫ কোটি ৩৪ লাখ, রূপালী ব্যাংক এক হাজার ৮৫ কোটি ৩০ লাখ, বেসিক ব্যাংক ৮৮০ কোটি ৮৬ লাখ ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এক হাজার ৭১ কোটি ৮ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। সরকারি দলের নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পহেলা জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ২৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ মওকুফ করেছে। একই দলের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১৬ হাজার একটি শুল্ক মামলার বিপরীতে অনাদায়ী রাজস্বের পরিমাণ সাত হাজার ৫৮৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বিএনপি’র হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সাত হাজার ৫৫৫ দশমিক ৭৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা প্রদানে ভারত ও বাংলাদেশের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ৩০শে জুন ৯০৪ দশমিক ৭৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ ছাড় হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এটি গতি লাভ করেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে তিনটি এলওসি চুক্তির আওতায় ৭ দশমিক ৫৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব ঋণের আওতায় অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যক্তি খাতের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে মুদ্রাপাচারের কথা আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখতাম। এ সংক্রান্ত অভিযোগ আজকাল আর শুনি না। তবে, সুনির্দিষ্ট মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়মিতভাবে তা খতিয়ে দেখছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, করোনার কারণে বন্ধ থাকা পুঁজিবাজার খোলার পর সরকারের পদক্ষেপে শেয়ার মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা তথা উন্নয়নের স্বার্থে এবং অস্বাভাবিক দরপতন রোধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়া বিশ্বব্যাপী একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক দরপতনের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের লেনদেনও এর ব্যতিক্রম নয়। ওই সময়কালে পুঁজিবাজারের লেনদেনও সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। করোনা পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজার খোলার পর থেকে সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের ফলে বাজারে বর্তমান শেয়ারমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরমধ্যে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইজ সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত নীতিমালা জারি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031