ঢাকা : তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু টিআর-কাবিখার বরাদ্দে চুরি নিয়ে মন্তব্য করায় সংসদ অধিবেশনে রীতিমতো তোপের মুখে পড়েন । সোমবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর এনিয়ে তুমুল হট্টগোল শুরু করেন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা। পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে তারা ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। জবাবে মন্ত্রী তার বক্তব্য প্রত্যাহারের পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ করেন। এতেও সংসদ সদস্যরা শান্ত না হলে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তীব্র ক্ষোভ ও হৈ-চৈ-এর মধ্য ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে সেটি অনভিপ্রেত ছিল। সেজন্য আমি সকল সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চাইছি। ‘টিআর-কাবিখার অর্ধেক বরাদ্দ যায় এমপিদের পকেটে’- রোববার রাজধানীর একটি আলোচনা সভায় এমন মন্তব্যে করায় তথ্যমন্ত্রীকে এমন ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরুর পর থেকেই এ বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেয়ার দাবি জানাতে থাকেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে অধিবেশনে তথ্যমন্ত্রী ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন, এটি বুঝতে পেরে মাগরিবের নামাজের বিরতি ২০ মিনিটের জন্য দেয়া হলেও বিষয়টি সুরাহা করতে আরও ৩০ মিনিট লাগে অধিবেশন শুরু করতে। কিন্তু সরকার ও বিরোধী দলের তীব্র দাবির মুখে স্পিকারকে এ বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দিতেই হয়। সরকার ও বিরোধী দলের প্রবীণ-নবীন প্রায় সকল সংসদ সদস্যই দাঁড়িয়ে ফ্লোর চাইলেও স্পিকার মাত্র তিন জনকে ফ্লোর দেন। তীব্র হৈ-চৈ’র মধ্যেই ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ক্ষমা প্রার্থণার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। পয়েন্ট অব অর্ডারে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করে তথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সকল এমপিদের কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। তথ্যমন্ত্রীর এলাকায় টিআর ও কাবিখার কি কি কাজ হয়েছে তা তদন্তেরও দাবি জানান তিনি। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সংসদের সাড়ে তিনশ’ সংসদ সদস্যই চোর, আর একমাত্র সাধু হচ্ছেন আমাদের তথ্যমন্ত্রী। সারাদেশে এতো উন্নয়ন কী বাতাসে হচ্ছে? তথ্যমন্ত্রী কি ম্যাসেজ জাতিকে দিতে চাইছেন? হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। এই সংসদের প্রতিটি সদস্যকে তথ্যমন্ত্রী অপমান করেছেন। এই সংসদে দাঁড়িয়ে উনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, তথ্যমন্ত্রী সবাইকে চোর বানাতে পারেন না। উনি যা বলেছেন তাতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রীরা কেউ-ই সেই অপবাদ থেকে বাদ পড়েন না। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, দুদকসহ তথ্যমন্ত্রীর সব মিডিয়া নিয়ে আমার এলাকা তদন্ত করুন। এক টাকার অনিয়ম হলে আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করবো। তবে তথ্যমন্ত্রীর এলাকারও তদন্ত করা উচিত। তথ্যমন্ত্রী সবারই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন, উনার বিবেকের তাড়নায় তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রী তার দপ্তরের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি নিজে জানাননি। এর মধ্য দিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের অপমান করেছেন। তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখে ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী প্রথমে তার বক্তব্যে প্রত্যাহার এবং দুঃখ প্রকাশ করলেও এমপিদের শান্ত করতে ব্যর্থ হন। এ সময় সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসনের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণার দাবি জানান। সংসদ সদস্যরা একযোগে প্রতিবাদ জানাতে থাকলে স্পিকার বলেন- তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। এরপরও আপনারা কি চান তা আমাকে বুঝতে হবে। এ সময় জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ আরও বেশ ক’জন সংসদ সদস্য মাইক ছাড়াই চিৎকার করে বলতে থাকেন- মাননীয় স্পিকার, তথ্যমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আমরা শান্ত হবো না। তাকে ক্ষমা চাইতেই হবে। এরপর দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বক্তব্যের জন্য এমপিদের সামনে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, রবিবার দুপুরে রাজধানীতে পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা ফাউন্ডেশনের একটি আলোচনা সভায় টিআর ও কাবিখা নিয়ে আমার একটি মন্তব্য নিয়ে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এই মন্তব্যে কেউ মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এ ব্যাপারে রবিবার রাতেই আমি একটি বিবৃতি দিয়েছি। আসলে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে টিআর ও কাবিখা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়ে আমি সম্প্রতি সময়ে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু দুর্নীতির কথা বলেছি। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করে কিছু বলিনি। এ সময় সংসদ সদস্যরা ‘নো নো, আপনি বলেছেন’ বলে প্রতিবাদ করতে থাকলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য আংশিকভাবে প্রচার হয়েছে, পুরোটা প্রচার হয়নি। তবে আমি একজন এমপি হয়ে অন্য সব এমপিকে আন্তরিকভাবে সম্মান করি এবং তা অব্যাহত আছে। তাই আমার বক্তব্যে এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাকে দুঃখিত এবং আমার ওই বক্তব্যে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। এরপরও সংসদ সদস্যরা শান্ত না হলে এবং পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ এমপি ফ্লোরের দাবি জানাতে থাকলে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এমপি ও জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে আমার মন্তব্যে অনভিপ্রেত ছিল। সেজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাচ্ছি। এরপর স্পিকার দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন কার্যাবলীতে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |