রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা শ্রমিকদের বেতন দিতে নতুন করে আরো তিন মাসের মজুরি ও ভাতা দেয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন । জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি দিতে সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে এ অর্থ চান তারা।

গত সোমবার তিন মাসের মজুরির জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ও বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান যৌথভাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে একটি চিঠি দেন।

তারা দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি পোশাক রপ্তানির সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক-কর্মচারীর আগামী জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আগের মতো সহজ শর্তে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

মালিকেরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ কারখানার মজুরি দেয়ার সক্ষমতা নেই। বর্তমানে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে শ্রমিক – কর্মচারীর এপ্রিল, মে ও জুন মাসের মজুরি দিচ্ছেন অনেক পোশাকশিল্পের মালিক।

এ বিষয়ে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তিন-চার মাস পর কারখানায় যেসব পোশাক আমরা তৈরি করব, তার ক্রয়াদেশ বর্তমানে আসার কথা। কিন্তু আসছে না। আসার কোনো লক্ষণও দেখছি না। অন্যদিকে বর্তমানে যেসব পোশাক উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর টাকা পেতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই টিকে থাকার জন্য মালিকদের সহায়তা দরকার।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত মার্চের শুরুর দিকে ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী গত ২৫শে মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

পরে অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ২রা এপ্রিল নীতিমালা জারি করে।

সেখানে বলা হয়, সচল কারখানা শ্রমিকের তিন মাসের (এপ্রিল , মে ও জুন) মজুরি দিতে তহবিল থেকে ঋণ পাবে। ঋণের জন্য কোনো সুদ নেই, তবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলো ২ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল নিতে পারবে। ঋণের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে দুই বছরের মধ্যে শোধ করবে ব্যাংকগুলো।

জানা যায়, তহবিল থেকে ঋণ পেতে বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৩৭০ বিকেএমইএর সদস্য ৫১৯ টি কারখানা আবেদন করেছিল। তবে নানা কারণে বিকেএমইএর ৯৯ সদস্য কারখানার আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এরপরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণােদনা প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থই ঋণ হিসেবে পেয়েছেন পােশাকশিল্পের মালিকেরা। ফলে দুই মাস ধরে পােশাকশ্রমিকদের একটি বড় অংশের মজুরি হচ্ছে প্রণােদনার টাকায়।

নতুন করে তিন মাসের মজুরি দেয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়ার পেছনে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সভাপতি যুক্তি দিয়েছেন , প্রতিনিয়ত বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বর্তমান ক্রয়াদেশ স্থগিত বা বাতিল করছে। এখন পর্যন্ত ৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চলতি ক্রয়াদেশের অর্থ পেতেও ছয় থেকে আট মাস সময় লেগে যেতে পারে। তা ছাড়া বর্তমানে যে ক্রয়াদেশ পাওয়া যাচ্ছে, তা সম্পন্ন করতে কারখানাগুলাে চালু রাখতে হবে। এ জন্য শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়মতাে পরিশােধ করে কাজে নিয়ােজিত রাখতে হবে। কিন্তু ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত ও নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে পােশাক খাত নিদারুণ আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।

চিঠিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সভাপতি আরো বলেছেন, পােশাকশিল্পের মালিকেরা শিল্পের ভবিষ্যৎ ও শ্রমিকদের মজুরি প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছেন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের বেতন পরিশােধ করা সম্ভব হবে না । এমন পরিস্থিতিতে পােশাকশিল্পকে সহায়তার জন্য তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশােধে আগের মতাে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা প্রয়ােজন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031