ছয়টি অভিযোগের কারণে হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত মাদ্রাসার মজলিশে শূরার বৈঠকে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ ছয়টি অভিযোগের লিখিত কপি আগে থেকে প্রস্তুত করা ছিল। মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানী শূরার বৈঠকে গিয়ে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছু ডকুমেন্ট উত্থাপন করেন।
আনাস মাদানী হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। তিনি মাদ্রাসার শূরা কমিটির সদস্য না হলেও বৈঠকে গিয়ে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। আনাস মাদানী বৈঠকে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সময় শূরা কমিটির সদস্যরা বিরক্তি প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, শূরা কমিটির বৈঠক চলাকালে দুপুর দুইটার দিকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে বৈঠকে ডাকা হয়। ৬টি অভিযোগের বিষয়ে শূরা কমিটির সদস্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি সবকটি অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এসময় সেখানে উপস্থিত আনাস মাদানী বাবুনগরীর বিরুদ্ধে কয়েকটি
অভিযোগের ডকুমেন্ট উত্থাপন করেন। গত ১৬ই মে হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদে
জোহরের নামাজ শেষে হেফাজতের কয়েকজন নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত
পরিচালক ঘোষণার বিষয়টি উত্থাপন করেন আনাস মাদানী। তিনি বৈঠকে এ ঘটনার
কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগ আনেন।
বাবুনগরী এ ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃৃক্ততা ছিল না বলে জানান। এটা ছাড়া
বাবুনগরীর বিরুদ্ধে আরো পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
জানা যায়, বৈঠকে
বাবুনগরীকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ৬টি লিখিত অভিযোগ শূরা
সদস্যদের পড়ে শুনানো হয়। মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা ফরিদাবাদ মাদরাসার
সহকারী পরিচালক মাওলানা মুফতি নুরুল আমীন এসব অভিযোগ পড়ে শুনান।
জানতে
চাইলে মুফতি নুরুল আমীন বলেন, ৬টি অভিযোগ আগ থেকে একটা কাগজে লেখা ছিল।
আল্লামা শফির উদ্ধৃতি দিয়ে তাতে লেখা ছিল, ৬টি অভিযোগ আমি পড়েছি, প্রমাণ
আছে। এই কপি আল্লামা শফি আমাকে পড়ে শূরা সদস্যদের শুনাতে বলেন।
৬টি
অভিযোগ কে লিখেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো আল্লামা শফির ছেলে আনাস
মাদানী লিখেছেন। তিনি তো বৈঠকে এসে জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে কয়েকটি
অভিযোগের ডকুমেন্ট দেখান। তখন শূরা কমিটির সদস্যরা আনাসকে থামিয়ে দেন।
বৈঠকে অংশ নেয়ার বিষয়ে আনাস মাদানীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
জানা
গেছে, মুফতি নুরুল আমীনকে দিয়ে আল্লামা শফি বৈঠকের সিদ্ধান্তের রেজ্যুলেশন
কপিতে লিখেন- ‘জুনায়েদ বাবুনগরীকে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণ দেখিয়ে
সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ওই পদে মাওলানা শেখ আহমদকে
নিয়োগ দেওয়া হলো, যা আমি মাদ্রাসার জন্য ভালো মনে করি।’
শূরার বৈঠকে
স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণ দেখিয়ে বাবুনগরীকে বাদ দেওয়া হলেও নানা
বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত ১০৪ বছর বয়সী আল্লামা শফিকে আমৃত্যু মাদ্রাসার
প্রধান পরিচালক ঘোষণা করা হয়।
ক্ষুব্ধ কওমি আলেম ও হেফাজতের একাংশের
নেতাকর্মীরা: হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক থেকে হেফাজতে
ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় কওমি
আলেম ও সংগঠনটির নেতাকর্মীদের একাংশ ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সংগঠনটির
নেতাকর্মীরা বাবুনগরী বাদ পড়ার পেছনে আল্লামা শফির ছেলে আনাস মাদানীর
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন।
৪ শূরা
সদস্যের ঢাকা থেকে হাটহাজারীতে হেলিকপ্টারে আসা নিয়ে সমালোচনা: হাটহাজারী
মাদ্রাসায় মজলিশে শূরার বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা থেকে সোমবার হেলিকপ্টারে করে
আসেন চার সদস্য। এরা হলেন কওমি বোর্ড বেফাকের মহসচিব ও ঢাকা ফরিদাবাদ
মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, ঢাকা খিলগাঁও মাখজানুল উলূম
মাদরাসার পরিচালক মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, ঢাকা ফরিদাবাদ মাদরাসার শুরা
কমিটির সিনিয়র সদস্য মাওলানা আবুল কাসেম ভূঁইয়া ও ঢাকা ফরিদাবাদ মাদরাসার
সহকারী পরিচালক মাওলানা মুফতি নুরুল আমীন।
জানা গেছে, হাটহাজারী
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই চার শূরা সদস্যকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে
আসেন। মাদ্রাসার ফান্ডের টাকায় চার সদস্যকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা নিয়ে
সমালোচনা করছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।