কুয়েতি পার্লামেন্টে মানবপাচারের দায়ে আটক বাংলাদেশি এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। করোনাকালীন সংক্ষিপ্ত ওই অধিবেশনে পাপুলককাণ্ড রীতিমতো উত্তাপ ছড়িয়েছে। স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা প্রশ্ন রেখেছেন একজন মাফিয়া কীভাবে এতোটা সাহস পায়? তারা পাপুলের ভিসা জালিয়াতি নমুনাও হাজির করেছেন। রিমান্ডে পাপুল তার অপকর্মের সহযোগী হিসাবে দেশি-বিদেশি যাদের নাম বলেছেন তা দ্রুত প্রকাশ এবং অভিযুক্তদের পাকড়াওয়ের দাবি জানিয়েছেন কুয়েতের সর্বদলীয় এমপিরা।
পাপুলকাণ্ডে এ পর্যন্ত সাবেক ও বর্তমান ৩ জন এমপি, স্বরাষ্ট্র ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়সহ ৭টি মন্ত্রণালয়ের টপ বস বা শীর্ষ কর্তা এবং ৩টি সংস্থায় কর্মরত অন্তত ২১ জন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে কুয়েত-সিআইডি। এদের কারও নাম প্রকাশ হয়নি। কিন্তু অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। পাপুলের রিমান্ডের শেষ দিনে একনাগাড়ে ৯ ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তাসহ যে দু’জন মধ্যস্থতাকারীকে মোটা অংকের ঘুষ দেয়ার কথা কবুল করেছেন তাদের এরইমধ্যে আটকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রিপোর্টে প্রকাশ আটক স্বরাষ্ট্রের পদস্থ ওই কর্মকর্তা মূলত পাপুলের অর্থ সরিয়ে নেয়ার কাজটি করে দিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, পাপুলের স্বীকারোক্তিতে লাক্সারি কারসহ দামী উপহার গ্রহণকারী হিসাবে পাওয়া ৩ জন কর্মকর্তাকেও তলবের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার মধ্যে মঙ্গলবার চাকরিচ্যুত জনশক্তি বিভাগের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তাও রয়েছেন। রিমান্ডে পাপুল তার সহযোগী ও বেনিফিশিয়ারি যাদের নাম বলেছেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না পেলেও নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে এসেছে। তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে ইঙ্গিতপূর্ণ ওই সব তথ্য নিয়ে খোদ কুয়েতি পার্লামেন্ট আলোচনা হয়েছে। পাপুলকে বাঁচাতে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার দায়ে অভিযুক্ত সংসদের বর্তমান দুই এমপি সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে যোগ দিয়ে এ ইস্যুতে কথা বলেছেন। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাদের নামে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে দাবি করে পাপুলের কাছ থেকে কোন ধরণের অন্যায় সুবিধা নেয়ার দায় অস্বীকার করেন ওই দুই এমপি। অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ সংসদে প্রদত্ত বিবৃতিতে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ভিসা বাণিজ্যে রাষ্ট্র হিসাবে কুয়েতের নিরাপত্তা বা অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে বিস্তৃত তদন্ত হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারা রেহাই পাবে না। এমপি, মন্ত্রী বিশিষ্টজন হলেও তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উল্লেখ্য, কুয়েতে মানবপাচার বিষয়ক সর্ব বৃহৎ এবং চাঞ্চল্যকর ওই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি এমপি ‘মাফিয়া বস’ খ্যাত কাজী পাপুলকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। তবে তার সহযোগী যারা আটক হয়েছেন জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে তাদের বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। জানা গেছে এমপি পাপুল ইস্যুতে কুয়েত সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ পর্যায়ের দু’জন কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের ব্যাংক একাউন্ট তালাশ করা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে। তবে ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটিপ্রাপ্ত ওই দুই বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদ না ঢাকা ফেরত পাঠানো হবে তা পরিস্থিতির নির্ভর করছে।