জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও শ্রম সংকটের ফলে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী কর্মী বছর শেষে দেশে ফিরে আসবেন বলে ধারণা করছে । সংস্থাটি বলছে, করোনা ইস্যুতে মন্দার কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের ফলে শুধু রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারগুলোই নয়, প্রভাবিত হবে তাদের কমিউনিটিও।
আন্তর্জাতিক ফ্যামিলি রেমিটেন্স দিবস উপলক্ষ্যে প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভর এমন এক হাজার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণার ফলাফলের তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
করোনায় বিশ্বের অনেক দেশের মতো থমকে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় এসব দেশে কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন অনেকে। যারা আছেন তাদের চাকরি হারানোর শঙ্কা তো আছেই, এবছরের শেষ নাগাদ ফেরতও আসতে হতে পারে। সব মিলিয়ে যার প্রভাব পড়ছে তাদের পরিবার এবং প্রবাসী আয়ে।
আইওএমের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী এবং রেমিটেন্স প্রেরকদের মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ (৯৮ শতাংশ)। এদের প্রায় ১২ শতাংশ অভিবাসী কর্মী একেবারেই স্কুলে যায়নি এবং প্রায় ৮০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন সেকেন্ডারি স্কুল পর্যন্ত। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে, অর্ধেক অংশ কাজ করেছেন কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে (৪৯শতাংশ) এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৬ শতাংশ) কাজ করেছে শ্রমিক হিসেবে যার মধ্যে দিন মজুরি, খণ্ডকালীন শ্রমিক আছেন।
বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনা কম অর্থ পাঠাতে পারেন বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন। কারণ অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীরা যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করে তা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা সর্বোচ্চ (৭৬ শতাংশ)। রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারের মোট ৬৫ শতাংশ পরিচালনা করেন নারী, যারা মূলত বেকার এবং সাধারণত রেমিটেন্সকে অ-আয় উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে খরচ করেন।
জরিপ মতে, রেমিটেন্স মূলত স্বল্পমেয়াদী প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয় এবং সম্পদের বৈচিত্র্য আনতে বা আর্থিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে খুব কমই ব্যবহৃত হয়, যা রেমিটেন্সের ওপর পরিবারের নির্ভরতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের স্বল্প অর্থনৈতিক জ্ঞান তাদেরকে টেকসই উপার্জন, রেমিটেন্স ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয় বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের মন্দা-প্রভাবিত রেমিটেন্স নির্ভর মানুষকে সহায়তায় অধিক নজর দিতে হবে। আমাদের অভিবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য সরকারকে সহায়তা করা প্রয়োজন, যাতে অভিবাসী কর্মীরা বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে পারে।’
‘একইসঙ্গে তাদের পরিবার, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে করে রেমিটেন্স উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত হয় এবং রেমিটেন্স নির্ভর পরিবারগুলোর স্থিতিস্থাপকতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তৈরি হয়।’
আন্তর্জাতিক সংস্থাটি গবেষণায় মোট চারটি সুপারিশের কথা বলেছে-
প্রথমত, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং রেমিটেন্স পরিচালনার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে স্বল্প দক্ষ অভিবাসী কর্মী আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং ঋণের চক্র ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে।
তৃতীয়ত, বিপদাপন্নতা হ্রাসে এবং আর্থিক স্বাধীনতার পথে সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন উন্নত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং সঞ্চয়ের আনুষ্ঠানিককরণ নিশ্চিত হয়।
চতুর্থত, নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে যাতে করে অর্থনীতির পরিমাপ এবং টেকসই কৌশলসমূহ বিবেচনা করে সম্পদ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।