বয়োজ্যেষ্ঠ একজন চিকিৎসক বুকে ধরে রেখেছেন ‘লকডাউন’ লেখা নোটিশ। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে দেশের চিকিৎসকদের মধ্যে। দেখা দিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ঘটা ওই ঘটনাকে অপমানজনক উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিস (এফডিএসআর)।
সোমবার এফডিএসআর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক ডা. কুশল কুমার বান্ধ্যার বুকে লকডাউনের পোস্টার ঝুলিয়ে ছবি তুলে তা উপজেলা প্রশাসনের জনৈক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন। করোনাকালেও চিকিৎসা সেবাদানে নিবেদিতপ্রাণ একজন স্বনামধন্য চিকিৎসকের প্রতি প্রশাসনযন্ত্রের এমন অনভিপ্রেত অমানবিক আচরণ সত্যিই জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক।’
এ ব্যাপারে এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে অপমান এবং কোভিড সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হয়েছে। তাদের এই গর্হিত কাজ চিকিৎসক সমাজকে অপমান করেছে। শিগগির তাদের এই কাজের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইত হবে। তা না হলে চিকিৎসক সমাজ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
জানতে চাইলে এফডিএসআরের যুগ্ম সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনা গোটা চিকিৎসক সমাজের জন্য মানসিক যন্ত্রণার কারণ। যেখানে করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে যখন সারা দেশের চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে, ঠিক সেই মুহূর্তে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রতি এমন অপমানজনক আচরণ চিকিৎসক সমাজের জন্য মেনে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘এ ধরণের ঘৃণ্য, অবিবেচনাপ্রসূত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনায় জড়িতের শাস্তি না হলে ভবিষ্যতের জন্য এটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাই যে কর্মকর্তা এ কাজটি করেছেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের চিকিৎসক কুশল কুমার বান্ধ্যার চেম্বারে ল্যাব সহকারী সুমন কুমার দাসের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে শিবগঞ্জ পৌর-এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের বাজার লাগোয়া মাস্টারপাড়া গ্রামে তাদের বাড়িটি লকডাউন করা হয়। সেই সঙ্গে লকডাউন করা হয় ডা. কুশলের চেম্বারটিও।
গত ১১ জুন বাড়ি ও চেম্বারটি লকডাউন কার্যকরের সময় সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাকিব আল রাব্বি, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস, উপজেলার একজন প্রকৌশলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।ওই সময় চিকিৎসক কুশল কুমারের বুকে ‘লকডাউন’ লেখা নোটিশ ধরে ছবি তোলা হয়। অভিযোগ আছে এই ছবিটি উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। যা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকদের নজরে আসে। তারা এ ধরনের অসম্মানজনক প্রচারণার প্রতিবাদ জানান।
এ ব্যাপারে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি বলেন, ‘উনার চেম্বারের একজনের করোনা ধরা পড়ায়, উনি নিজে থেকেই তার চেম্বার লকডাউন করেছেন। উনি নিজেই লকডাউন লেখা কাগজ এনে আমাদের দেখান। আমরা নিজে থেকে কিছু করিনি।’
জানতে চাইলে ডা. কুশল কুমার বান্ধ্যার বলেন, ‘এই ছবিটি কে তুলেছে আমি জানি না। তবে এটি আমাকে মানসিকভাবে আহত করেছে। এটি অশোভন ও দৃষ্টিকটু। লকডাউনের ছবি তুলতে হলে আমার চেম্বারে লকডাউন লিখে তা তুলতে পারত, আমার বুকে ধরা ছবি কেন ফেসবুক দিল?’
বয়োজ্যেষ্ঠ এই চিকিৎসক বলেন, ‘ইউএনও সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ ঘটনার জন্য আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি আসতে চেয়েছিলেন। আমি বারণ করেছি। কারণ আমি কোয়ারেন্টাইনে আছি। পরে ইউএনও সাহেব জানিয়েছেন তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্ষমা চাইবেন।’